কর্মক্ষেত্রে হেনস্থার শিকার হয়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছেন চন্দননগরের যুবতী। প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই জানাল পুলিশ। ওই ঘটনায় দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত যুবতীর খোঁজ মেলেনি। এখনও গঙ্গায় বোট নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। নামানো হয়েছে ডুবরি।
মঙ্গলবার সকালে চিঠি লিখে নদীর পারে সেটা মোবাইল চাপা দিয়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন চন্দননগরের বৌবাজার বটতলার বাসিন্দা মানালি ঘোষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলের ঠিক উল্টো দিকে (পাতালবাড়ির কাছে) গঙ্গায় ঝাঁপ দেন এক যুবতী। পরে তাঁর পরিচয় জানা যায়। নদীর পারে পাওয়া যায় তাঁর মোবাইল এবং একটি চিঠি। পুলিশ মনে করছে, সেটি সুইসাইড নোট। আত্মহত্যার চেষ্টার নেপথ্যে কর্মক্ষেত্রে হেনস্থার দাবি করা হয়েছে।
পরিবার সূত্রে খবর, বছর তিনেক আগে বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়েছে মানালির। আগামী বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। পাত্রের নাম সত্যজিৎ রায়। বৌবাজারের শীতলাতলার বাসিন্দা তিনি। পরিবারের লোকজন মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার মধ্যে গঙ্গায় মরণঝাঁপ দেন মেয়ে। মানালির বাবার দাবি, কর্মক্ষেত্রে অপমানিত হয়েছেন মেয়ে। জানা গিয়েছে, গত তিন বছর ধরে চন্দননগর বাগবাজারে জিটি রোডের পাশের একটি গয়নার দোকানে ‘সেল্স গার্ল’-এর কাজ করতেন মানালি। দিন তিনেক ধরে কর্মস্থলে কোনও সমস্যা হচ্ছিল যুবতীর। স্থানীয়েরা জানান, কিছু দিন আগে দোকানের বাইরে বসে তাঁকে কান্নাকাটি করতে দেখেছেন তাঁরা। বাড়ির লোক জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বার হন মেয়ে। তবে বাড়িতে বলেছিলেন, তিনি চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জোর করে লিখিয়ে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:
মঙ্গলবার সকালে দোকান ঢুকে কিছু ক্ষণ পরে বেরিয়ে স্বামীকে ফোন করেছিলেন মানালি। তার পর চন্দননগর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কিছু ক্ষণ বসেছিলেন। মনে করা হচ্ছে, সেখানেই সুইসাইড নোট লেখেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, যেখানে ওই যুবতী কাজ করতেন, সেই দোকান কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে চিঠি লিখেছেন তিনি। ইতিমধ্যে ওই গয়নার দোকানে গিয়ে অন্যান্য কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দোকানের মালিক দম্পতি সঞ্জয় এবং মমতা দাসকে আটক করা হয়েছে। তবে মমতার দাবি, মানালির মাসনিক অবসাদ ছিল। মানালির বাবা মানস ঘোষ অবশ্য তা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে আমার মেয়েকে।’’
মানালির ভাসুর শুভজিৎ রায় বলেন, ‘‘দোকানে কোনও একটা সমস্যা চলছিল। তবে সেটা ঠিক কী, আমরা বলতে পারব না। আজ (মঙ্গলবার) সকালে দোকানে ঝামেলা হয়েছিল। তার পর সেখান থেকে বেরিয়ে যায় মানালি। ভাইকে ফোন করেছিল ও। বলেছিল, ‘এই দোকানের কাজটা আর নেই।’ আমার ভাই একটি কারখানায় কাজ করে। চন্দননগর স্ট্যান্ডে মানালিকে বসতে বলে ও বেরোয়। কিন্তু ভাই যখন পৌঁছোয়... তখন যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে।’’