হাওড়া শহরে বেআইনি বাড়ি তৈরির প্রবণতা রুখতে এ বার প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় এফআইআর দায়ের করতে শুরু করল হাওড়া পুরসভা। শহর জুড়ে বেআইনি বাড়িগুলি চিহ্নিত করে ইতিমধ্যেই ৪২টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সেই সূত্রেই ২৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে হাওড়া সিটি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগ, হাওড়া পুর বোর্ডের দায়িত্ব তৃণমূল নেওয়ার পরেই গোটা শহর জুড়ে বেআইনি বাড়ির রমরমার পাশাপাশি শুরু হয় প্রোমোটার-রাজ। ২০২০ সালের মধ্যে পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা প্রায় পাঁচ হাজার বেআইনি বাড়ির তালিকা তৈরি করেন। এর মধ্যে সেই সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। বেআইনি বাড়ি তৈরি রুখতে পুরসভার পক্ষ থেকে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। যেমন, পুরসভার অনুমোদিত নির্মাণ নকশা, জমির বিবরণ, নির্মাণকারী সংস্থার নাম ও ঠিকানা-সহ বিস্তারিত তথ্য নির্মীয়মাণ বাড়ির নীচে বোর্ডে ঝুলিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি, পুর ওয়েবসাইটে অনুমোদিত সেই নকশা আপলোড করা হবে। পুরসভার ঘোষণা মতো সেই কাজও শুরু হয়। কিন্তু তার পরেও কিছু অসাধু প্রোমোটার ‘অ্যাসমেড প্ল্যান’ (জরিমানা দিয়ে বেআইনি অংশকে আইনি করা)-এর হুজুগ তুলে বেপরোয়া ভাবে পুরসভার অনুমোদিত চারতলা বাড়ির জায়গায় কোথাও ছ’তলা, কোথাও সাততলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে।
হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এই শহরে বেআইনি বাড়ির সংখ্যা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। অনেকে নির্মাণ নকশা মেনে বাড়ি তুলেছেন। অনেকের আবার নকশাই নেই। এই ধরনের অধিকাংশ বেআইনি বাড়িই হচ্ছে উত্তর হাওড়ার মালিপাঁচঘরা, শিবপুর, হাওড়া থানা, বটানিক্যাল গার্ডেন থানা, ব্যাঁটরা থানা, চ্যাটার্জিহাট থানা এলাকায়। এর মধ্যে ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পুরসভার দায়িত্বে থাকা প্রশাসকমণ্ডলী ওই সব এলাকায় প্রায় ১৪৫টি বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেয়। তার পরেও শহরে বেআইনি বহুতল তৈরির কাজ বন্ধ হয়নি।’’
পুরকর্তাদের বক্তব্য, ঘিঞ্জি এলাকায় এর আগে বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়ে অনেক খরচ করেছে পুরসভা। এতে পুর তহবিলও নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি, বেআইনি বাড়ি ভাঙা হলে সেই ভাঙা অংশ মেরামত করে তলা বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাই এ বার সরাসরি আইনি ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রোমোটারের বিরুদ্ধে এফআইআর হলে মোটা অঙ্কের জরিমানা ও জেল যাতে হয়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে বলা হয়েছে। এক পুর ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘নতুন যাঁরা বাড়ি কিনছেন, তাঁদের উচিত, হাওড়া পুরসভার ওয়েবসাইট দেখে বিল্ডিং প্ল্যান সম্পর্কে জেনে নেওয়া। তা না-হলে বেআইনি অংশের জন্য তিনি যেমন মিউটেশন করাতে পারবেন না, তেমনই রেজিস্ট্রিও করাতে পারবেন না।’’ পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, এখন থেকে প্রতি মাসে লাগাতার বেআইনি বাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। রাজনীতির রং দেখে কাউকে রেয়াত করা হবে না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)