Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Student

নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সংসারে, ‘এগিয়ে’ যেতে টোটো চালান শ্রীরামপুর কলেজের ছাত্রী তমা

চাঁপদানির বাসিন্দা তমা দত্ত। শ্রীরামপুর কলেজের বাংলা অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ভাড়াবাড়িতে মা, বাবা, ভাই এবং বোনকে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার তাঁর। টোটো চালিয়েই সংসার চালান তমা।

যিনি পড়াশোনা করেন তিনি টোটোও চালান। লড়াই চালাচ্ছেন তমা দত্ত।

যিনি পড়াশোনা করেন তিনি টোটোও চালান। লড়াই চালাচ্ছেন তমা দত্ত। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৫৬
Share: Save:

বাবা অসুস্থ। এ ছাড়া সংসারে রয়েছেন মা, ভাই এবং বোন। পাঁচ জনের সংসার টানার পাশাপাশি, নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে টোটো চালান হুগলির শ্রীরামপুর কলেজের ছাত্রী তমা দত্ত। তাঁর আশা, এ ভাবেই এক দিন গতি আসবে তাঁদের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা সংসারে।

চাঁপদানি পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তমাদের পরিবার। শ্রীরামপুর কলেজে বাংলা অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তমা। ভাড়াবাড়িতে মা, বাবা, ভাই এবং বোনকে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার। সংসারে অভাব অনটন ছিলই। সম্প্রতি বাবা অসুস্থ হওয়ায় সেই অনটন আরও বেড়েছে। বন্ধ হয়েছে বাবার সব্জির ব্যবসাও। সংসারের একমাত্র রোজগেরে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেও মনের জোর হারাননি তমা। নিজেই টোটো নিয়ে নেমেছেন রাস্তায়। দত্ত পরিবারের হাল ধরেছেন নিজেই।

সকালে তমা বেরিয়ে পড়েন টোটো নিয়ে। ফিরে যান কলেজে। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে রাতে আবার তিনি বেরিয়ে পড়েন টোটো নিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারকে সাহায্য করতে হবে। তাই কিছু আয়ের প্রয়োজন। এ জন্য টোটো চালানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। সব্জি বিক্রির জন্য টোটো একটা কিনেছিল বাবা। সেটাই চালানো শিখে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি আমি।’’

টোটো চালাতে গিয়ে তমার সময় যায় অনেক। তাই যতটুকু সময় পান, ততটুকুই তিনি ব্যয় করেন পড়াশোনায়। তাঁর ইচ্ছা, পরীক্ষায় ভাল ফল পেয়ে চাকরি করবেন তিনি। শুধু নিজের পড়াশোনা নয়, ভাইবোনের পড়াশোনার খরচও চালাতে হয় তমাকে। বড় মেয়ে সংসারের ‘বড় দায়িত্ব’ নেওয়ায় খুশিতে উজ্জ্বল তমার মা অঞ্জলি দত্তের মুখ। তাঁর কথায়, ‘‘ওর বয়সই বা কত! তবুও সংসারের অনেক বড় দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে আমার বড় মেয়ে। বাবার ওষুধ, ভাইবোনের টিউশন খরচ সবই জোগায় ও। রাতে যখন ও টোটো নিয়ে বেরোয় তখন আমিও থাকি মাঝেমাঝে। ওর বাড়ি ফিরতে রাত হয়। আমি ওকে বলেছিলাম, কোনও দোকানে কাজ কর। সেই প্রস্তাব শুনে আমার মেয়ে বলেছিল, ‘দোকানে কাজ করলে পড়াশোনার সময় পাব না।’ তাই টোটো চালিয়েই ও সংসার চালাচ্ছে।’’

সংসারের কথা বলতে গিয়ে চোখে জল চলে আসে অঞ্জলির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student college student Toto driver
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE