নিজেদের আঁকা ছবিতে দাঁড়িয়ে চৌধুরী দম্পতি। ছবি: তাপস ঘোষ।
মাঝরাস্তায় রাতারাতি তৈরি আস্ত সেতু! হাইমাস্টের খুঁটিতে ঘেরাটোপ! বাড়ি থেকে বেরিয়েই এলাকাবাসী দেখলেন, কে যেন কুয়ো বানিয়ে রেখেছে!
কোনওটাই আসল নয়। হাতে আঁকা ত্রিমাত্রিক (থ্রি-ডি) ছবি। হুগলির ভদ্রেশ্বরের এনএস রোড হিন্দুস্থান পার্কের চন্দন চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী পুনম ওই ছবি এঁকে ভিডিয়ো তুলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সমাজমাধ্যমে। লাখো দর্শক মুগ্ধ হচ্ছেন। সকলেরই প্রিয় হয়ে উঠছে তাঁদের শিল্পকর্মের নমুনা। বাহবা তো মিলছেই, অর্থ উপার্জনও মন্দ হচ্ছে না। মাত্র দেড় বছরে চন্দনের ইউটিউব চ্যানেলের ‘সাবস্ক্রাইবার’ ৮০ লক্ষ ছুঁইছুঁই। পুনম ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন সবে চার মাস। তাঁর ‘সাবস্ক্রাইবার’ সাড়ে তিন লক্ষ।
কী ভাবে মাথায় এল এই ভাবনা?
বছর আটত্রিশের চন্দনের ছিল ডিশ অ্যান্টেনার ব্যবসা। পুনম ঘরসংসার সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন। কোভিড-পর্বে লকডাউনের সময়ে ঘরে বসে নতুন কিছু করার ভাবনা জাগে। তখন ইন্টারনেট ঘাঁটা শুরু করে ত্রি-মাত্রিক ছবি তৈরির ভাবনা আসে। প্রথাগত ভাবে কোথাও না শিখলেও চন্দনের বরাবরের শখ ছিল ছবি আঁকা। সেই শখকে কাজে লাগিয়েই দু’জনে লেগে পড়েন। শুরুতে বাড়ির ছাদে নিজেদের ঘষামাজা করে নেওয়া। স্বামীর হাত ধরে পুনমও অল্প সময়ে ছবি এঁকে তার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন। বাড়ির ছাদ থেকে দম্পতি নেমে আসেন কংক্রিটের রাস্তায়। লোকজনের নজর কাড়ে তাঁদের কাজ। মূলত নিজেদের এলাকাতেই ছবি আঁকেন তাঁরা।
গত বছরের শুরুতে চন্দন ইউটিউব চ্যানেল করেন। এখন তিনি রাজ্যের প্রথম সারির ইউটিউবার। চন্দনের বেশিরভাগ ভিডিয়োয় পুনমকে দেখা যায়। মোবাইল ফোনের পর্দায় ছবি দেখে বোঝার উপায় থাকে না, রাস্তার উপরে আঁকিবুকি। পুনমের চ্যানেলের জনপ্রিয়তাও দ্রুত বাড়ছে।
চন্দন জানান, কাঠ-কয়লা ও চক দিয়ে ছবি আঁকা হয়। সূর্যের আলোয় ছবির ত্রি-মাত্রিকতা বোঝা যায় না। কারণ, বাস্তবে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা না থাকায় ছবির প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হয় না। তাই যে সব জায়গায় সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে না, সে সব জায়গায় ছবি আঁকা হয়। সেই ছবির ভিডিয়ো তুলে ইউটিউবে আপলোড করা হয়। প্রতি সপ্তাহেই ভিডিয়ো আপলোড করেন দম্পতি। কাঠকয়লায় যাতে রাস্তা নোংরা না হয়, সে জন্য ছবি তোলা হয়ে গেলে, রাস্তা ধুয়ে দেন।
চন্দনের কথায়, ‘‘আমাদের এক-একটি ইউটিউব ভিডিয়োয় দর্শক সংখ্যা এক কোটি পেরিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ভালই চলছে। মানুষকে আনন্দ দিতে পারছি। নিজেদের উপার্জনও হচ্ছে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy