বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের জেরে সে পিতৃহারা হয়েছিল। অ্যাডমিট কার্ড, আধার কার্ড-সহ সব নথি পুড়ে গিয়েছিল। সব প্রতিবন্ধকতা সামলে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হল হাল্যান গ্রামের রেনুইয়া খাতুন। ফলাফল খুব ভাল না হলেও মেয়েটির প্রত্যয়, পড়াশোনা করে বড় হওয়ার। বাবার স্বপ্ন সফল করার।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে আগুন ধরে যায় রেনুইয়ার বাড়িতে। পরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সেই আগুন ছড়ায়। দমকলের অনুমান ছিল, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের জেরে ওই অগ্নিকাণ্ড। রেনুইয়ার বাবা রিয়াজুল আলম-সহ পরিবারের চার জন জখম হন। রিয়াজুলের অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় তাঁকে উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়েছিল। সেখানে তিনি মারা যান ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে। সে দিনই শুরু হয় মাধ্যমিক পরীক্ষা। রেনুইয়া পরীক্ষা দিতে যাবে বলে বাড়ির লোকেরা ওই সময় তাকে বাবার মৃত্যুসংবাদ দেননি। পরীক্ষা দিয়ে ফিরে সে দুঃসংবাদ পায়। তবে, শোকের মধ্যেও পরীক্ষা দেওয়াই সে মনস্থ করে। তার পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল পাশের গ্রামে রূপাসগড়ি হাই স্কুলে। প্রতিবেশীদের সহায়তায় জরুরি ভিত্তিতে তার আডমিট কার্ডের ব্যবস্থা করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ দিন মার্কশিট হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে রেনুইয়া। সে পেয়েছে ২৩১ নম্বর। মা রেহানাকে জড়িয়ে ধরে সে বলে, ‘‘বাবা বেঁচে থাকলে কত খুশি হতেন!’’ পরে মেয়েটি বলে, ‘‘ফলাফল মোটেই ভাল হয়নি। বাবার মৃত্যুর পরে ভাঙা মন নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি।’’ সে আরও পড়তে চায়। বলে, ‘‘বাবা চাইতেন, আমরা যেন মন দিয়ে পড়াশোনা করি। বড় হই। বাবার স্বপ্ন সফল করব।"
রেনুইয়ারা তিন বোন, এক ভাই। বড়দির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তার পরের বোন পড়ে নবম শ্রেণিতে। ভাই পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। রেনুইয়ার কাকা সামসুল আলম , প্রতিবেশী শেখ মসিয়ররাই এখন আগলে রেখেছেন ওই পরিবারকে। সামসুল বলেন, ‘‘রেনুইয়া তদূর পড়তে চাইবে, পড়বে। আমরা ওর পাশে আছি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)