নামেই ঝিল। অথচ, জলের দেখা নেই। হাওড়া শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ঝিল প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা। আর জি কর পরিবারের সম্পত্তি ঝিলটি কার্যত দখলদারদের হাতে চুরি হয়ে গিয়েছে। ৫৮ ফুট চওড়া ঝিলটির দুই পাড় বেপরোয়া ভাবে বুজিয়ে তৈরি হয়েছে পর পর বহুতল ও ঘরবাড়ি। নিকাশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে গোটা ঝিলটি ভ্যাটে পরিণত হয়েছে। প্রতি বর্ষায় জমা জল আর ডেঙ্গির আতঙ্কে থাকতে হয় পুরসভার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।
হাওড়া পুরসভার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শহরের মধ্যে থাকা আর জি কর পরিবারের ওই ঝিলটি মতিঝিল নামে পরিচিত। পুরসভার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোড সংলগ্ন কলাবাগান লেন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের বেলেপোল পর্যন্ত ঝিলটির বিস্তৃতি। এলাকার প্রবীণ নাগরিকেরা জানাচ্ছেন, এই ঝিল থেকে জেলেরা মাছ ধরতেন। স্নান করা থেকে বাসন মাজা— সবই এই ঝিলের জলে হত। কিন্তু দিনের পর দিন সংস্কার না করায় ক্রমে সেটি মজে যায়। সেই সুযোগে আশপাশের বাসিন্দারা ঝিলের দু’ধার বুজিয়ে ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন।
কলাবাগান লেনের এক প্রবীণ বাসিন্দা সমর মান্না বলেন, ‘‘এই ঝিলটি কলাবাগান লেন, মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোড, শাস্ত্রী নরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি রোড-সহ ড্রেনেজ ক্যানাল রোড ও বেলেপোল এলাকার একমাত্র নিকাশি। কিন্তু আর জি করের নাম বিজড়িত এই ঝিলটি দখলদার ও সংস্কারের অভাবে বুজে যাওয়ায় এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে গিয়েছে। সামান্য দু’-এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়।’’
কলাবাগান লেনের তস্য গলি দিয়ে ঢুকে দেখা গেল, ঝিলের পরিবর্তে দীর্ঘ আগাছার জঙ্গল। মশার অত্যাচারে কিছু ক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকাও দায়। বাসিন্দা রমা রায়, মালা দাস, সাধনা দত্তেরা বলেন, ‘‘মশায় অতিষ্ঠ। রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রী, হাওড়া পুরসভা, স্থানীয় প্রাক্তন পুরপ্রতিনিধিকে জানিয়েও লাভ হয়নি। বর্ষা এলেই জমা জল আর ডেঙ্গির আতঙ্কে থাকি।’’
ঝিলটি সংস্কার হয়নি কেন? আর জি কর পরিবারের সদস্য পার্থ কর বলেন, ‘‘এটা আমাদের পরিবারের ঝিল ঠিকই। কিন্তু এত বড় ঝিল সংস্কার করা অসম্ভব। পুরসভাকে জানিয়েছি। পুরসভা দ্রুত সংস্কার করবে বলে শুনেছি।’’
তবে অভিযোগ, প্রতি বর্ষার আগে মতিঝিল সংস্কারের কথা বলে হলেও পুরসভা আজ পর্যন্ত সদর্থক ভূমিকা নেয়নি। যার জেরে গত কয়েক বছর ধরে ড্রেনেজ ক্যানাল রোড-সহ ইছাপুর ডুমুরজলার বাসিন্দাদের বর্ষার সময়ে জমা জলে দুঃসহ অবস্থা হয়। পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মতিঝিল সংস্কারের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। আগামী মার্চ থেকে এই ঝিলটির ড্রেজ়িং শুরু হবে। আশা করা যায়, এ বার এলাকার নিকাশি সমস্যা কিছুটা মিটবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)