E-Paper

একাশিতেও গাছ লাগিয়ে ফেরেন ‘গাছদাদু’, স্বীকৃতি পুরস্কারে

শ্যামাপদ যখন আট বছরের, গাছ লাগানো এবং পরিচর্যার শুরু তখনই। সেই বালক এখন একাশির বৃদ্ধ। বয়সকে তুড়ি মেরে আজও তিনি গাছ লাগিয়ে ফেরেন গ্রাম থেকে গ্রামে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ০৮:২৭
পুরস্কার নিচ্ছেন ‘গাছদাদু’।

পুরস্কার নিচ্ছেন ‘গাছদাদু’। —নিজস্ব চিত্র।

তাঁর মাটির দোতলা বাড়ি জরাজীর্ণ। সে দিকে খেয়াল নেই। মন পড়ে থাকে গাছের জন্য। বাড়ির উল্টো দিকের পুকুর ঘিরে তালগাছের সারি। তাতে বাবুই পাখির বাসা। সেই গাছের কয়েকটি নিজের হাতে লাগিয়েছেন তিনি। বাঁকুড়ার সারেঙ্গার শালবনি গ্রামের শ্যামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের গোটা গাঁয়ে তো বটেই, রুখু জেলার অন্যান্য প্রান্তেও অজস্র গাছ লাগিয়েছেন। লোকমুখে হয়ে গিয়েছেন ‘গাছদাদু’।

শ্যামাপদ যখন আট বছরের, গাছ লাগানো এবং পরিচর্যার শুরু তখনই। সেই বালক এখন একাশির বৃদ্ধ। বয়সকে তুড়ি মেরে আজও তিনি গাছ লাগিয়ে ফেরেন গ্রাম থেকে গ্রামে। প্রকৃতি, পরিবেশকে এমন ভালবাসার জন্য শ্যামাপদকে এ বারের ‘সুদক্ষিণা লাহা স্মৃতি পুরস্কার’ দিল শ্রমজীবী হাসপাতাল। গত রবিবার সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি হয় শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে।

পুরস্কার কমিটির সদস্য গৌতম সরকার জানান, শ্যামাপদ ছেলেদের সঙ্গে চাষ করেন। বাড়ির চেহারায় অভাব স্পষ্ট। কিন্তু শ্যামাপদ প্রাণোচ্ছল। তিনি জানান, গত সাত দশকে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ লাগিয়েছেন। বট, অশ্বত্থ, খেজুর, আম, জাম, কাঁঠাল, তাল, নারকেল— কী নেই সেই তালিকায়! বস্তায় ফলের বীজ নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন। কখনও হেঁটে, কখনও সাইকেলে। তাল গাছ বেশি লাগানোর চেষ্টা করেন। কারণ, তালশাঁস, তালের বড়া, জ্বাল দেওয়া তাল উপাদেয়। প্রোটিনও ভরপুর। তালপাতা দিয়ে হাতপাখা হয়। তালগাছে বাবুই-সহ অন্য পাখি বাসা বাঁধে। শুকনো পাতা জ্বালানির কাজে লাগে। এই গাছ উপকারী, অর্থকরীও।

শ্যামাপদর কাজ অন্যদের অনুপ্রাণিত করেছে। গ্রামের কিছু যুবক-যুবতী গাছ লাগানোর জন্য গড়েছেন ‘গ্রিন আর্মি’। তাঁদের ক্যাপ্টেন ‘গাছদাদু’। ‘গ্লোবাল গ্রিন ফোর্স’ সংগঠনের সারেঙ্গা শাখার সদস্য শ্যামাপদ। বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে গাছ লাগানো এবং গাছ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা আজ স্পষ্ট। অথচ, নানা জায়গায় চলছে বৃক্ষনিধন। কোথাও তা উন্নয়নের কাজের ধুয়ো তুলে! এ সবে ক্ষুব্ধ ‘গাছদাদু’র প্রশ্ন, ‘‘নিজের হাতে বীজ পুঁতে তাকে বড় করার পরে কেউ কেটে দিলে, কষ্ট হবে না?’’ জানিয়ে দেন, যত দিন শরীর দেবে, তিনি গাছ লাগিয়ে যাবেন। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে পরিবেশবিদ জ্যোতির্ময় সরস্বতী বলেন, ‘‘গাছ কত জরুরি, আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। সরকারি উদ্যোগে ঘটা করে গাছ লাগানো হলেও যত্নের অভাবে বাঁচে না। শ্যমাপদবাবুরা আমাদের প্রেরণা।’’

ওই অনুষ্ঠানে ‘শ্রমজীবী মন’ পত্রিকার বিচারে ‘শর্মিলা ঘোষ সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন প্রবীণ সাহিত্যিক ভগীরথ মিশ্র। অনুষ্টুপ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর ছোটগল্প ‘রতন নামের ঘোড়া’র জন্য ওই পুরস্কারপ্রাপ্তি। জমিদারি ব্যবস্থার পত্তন এবং প্রজাতন্ত্র গড়ে ওঠার সন্ধিক্ষণ এই গল্পের প্রেক্ষাপট। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় হাসপাতালের সেবিকাদের গানে। ছিল গান, স্বরচিত কবিতা, আবৃত্তি। প্রকাশিত হয় ‘শ্রমজীবী মন’ পত্রিকার সংখ্যা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tree Plantation Prize sreerampur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy