Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Anis Khan

Anis Khan Murder: আনন্দের লেশ নেই আনিসের গ্রামে

গ্রামটি সংখ্যালঘু প্রধান। প্রতি বছর এই বিশেষ দিনটা কী ভাবে উদ্‌যাপন হবে, আগে থেকে পরিকল্পনা করতেন আনিস।

ফাইল ছবি

সুব্রত জানা
আমতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২২ ০৬:১৪
Share: Save:

না জ্বলেছে আলো। না বেজেছে গান। গ্রামের তরতাজা ছেলেটাই যে নেই।

এ বারই প্রথম খুশির ইদে শোকের ছায়া পড়ল হাওড়ার আমতার সারদা গ্রামের দক্ষিণ খাঁপাড়ায়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় এ পাড়ার বাসিন্দা, ছাত্রনেতা আনিস খানের। তারপর থেকে একটি দিনও কাটেনি, যে দিন ওই যুবককে নিয়ে পাড়ায় আলোচনা হয়নি। অপমৃত্যুর তদন্ত নিয়ে বিস্তর চর্চা, জল্পনা এখনও চলছে। গ্রামটি সংখ্যালঘু প্রধান। প্রতি বছর এই বিশেষ দিনটা কী ভাবে উদ্‌যাপন হবে, আগে থেকে পরিকল্পনা করতেন আনিস। এমনটাই জানাচ্ছেন তাঁর বন্ধু আব্দুল রহিম, রফিকুল খান, সফিরুল খানরা। তা সে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হোক বা গরিব-দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যের জন্য চাঁদা তোলা। গোটা গ্রাম আলোর মালায় সাজত। এ বার কিছুই হল না। রফিকুল বলেন, ‘‘গ্রামে আলো লাগানো থেকে সব কিছু— আনিস ইদের জন্য যা পরিকল্পনা করত, সবাই মেনে নিতাম। এ বার আর কে পরিকল্পনা করবে? কারও মন ভাল নেই। তাই খুশির ইদেও কোনও আনন্দ নেই গ্রামে।’’

এ দিন সকাল সাতটায় গ্রামবাসীরা আনিসের কবরস্থানে গিয়ে নমাজ পড়েন। অনেকেই চোখের কোল চিকচিক করছিল। প্রতিবার এই দিনে আনিসদের বাড়িটাও আলোয় সাজানো হত। এ বার সেখানে শোনা যাচ্ছিল কান্নার শব্দ। প্রতি বছর আনিস বাবা সালেম খানকে সঙ্গে নিয়ে ইদের নমাজ পড়তেন। পরে বাবা-সহ পরিবারের সকলের সঙ্গে ছবি তুলতেন। এ দিন সকালের অনেকটা সময় মোবাইলে সেই সব পুরনো ছবি দেখেই কাটালেন পরিবারের সকলে।

ওই পরিবারের লোকজন জানান, পুরো রমজান মাস আনিস বাড়িতেই কাটাতেন। নিজের হাতে ইদের বাজার করতেন। এ বার আনিস নেই। কারও নতুন পোশাকও হয়নি। পুরনো জামা পরেই সকলে ইদের নমাজ পড়েছেন। আনিসের ভাগ্নি মুসকান কলেজ ছাত্রী। তাঁর মনে পড়ছে, ‘‘মামা প্রতি বছর সঙ্গে করে নিয়ে জামা কিনে দিত। ইদের দিন কত মজা করত! কী রান্না হবে, সেটা মামাই ঠিক করে দিত। ঘুরতে নিয়ে যেত। পুরো বাড়িটাই আলো এবং রঙিন কাগজ দিয়ে সাজিয়ে তুলত। বারবার মামার কথা মনে পড়ছে।’’

আনিসের দাদা সাবিরের স্মৃতিচারণ, ‘‘আজ ভাইকে বেশি করে মনে পড়ছে। ইদে ভাই কত কী-ই করত। নমাজের পরে সকলের সঙ্গে কোলাকুলি। প্রতি বছরই দুঃস্থদের জন্য নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সাহায্য তুলত। দু’তিন বছর আগে কেরলের বন্যাদুর্গতদের জন্য সাহায্য তুলেছিল এই ইদের দিনে। ও বলত, যাঁরা ইদে আনন্দ করতে পারছেন না, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’’ এ দিন সকাল থেকে ওই বাড়িতে অনেকে গিয়ে আনিসের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে আসেন। গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ওই দলের নেতা শতরূপ ঘোষ, আমতার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র এবং ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীও। সেলিম সিটের তদন্ত নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আনিসের মৃত্যু-রহস্য শুধু গ্রামবাসী নয়, সারা দেশ জানতে চাইছে। অপরাধীদের শাস্তি না হলে তাদের রাতের ঘুম আমরা কেড়ে নেব।’’
আনিস প্রসঙ্গে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আনিস-কাণ্ডে সিট তো আদালতে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সিপিএম বা বিজেপির এ নিয়ে কিছু বলার থাকলে আদালতে বলবে। আসলে সস্তায় রাজনীতি করতে এই বিষয়গুলিকে আঁকড়ে ধরছেন ওঁরা।’’ আনিসের বাবা বলেন, ‘‘প্রায় তিন মাস হয়ে গেল আনিসের মৃত্যু হয়েছে। আমরা বারে বারে আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত চাইছি। না পেলে এরপর আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anis Khan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE