নোটিস দেওয়া হয়েছিল আগেই। ‘বৈধতা’ নেই জানিয়ে গত মাসের শেষ দিকে ব্যান্ডেল রেল ইয়ার্ডে থাকা শরৎচন্দ্র বহুমুখী শিক্ষানিকেতন নামে প্রাথমিক স্কুলটি বন্ধ করে দেয় রেল। এর প্রতিবাদে খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে প্রায় ৩ ঘণ্টা স্কুলের কাছে অবরোধে শামিল হলেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকেরা। স্টেশনে ঢোকার মুখে অবরোধের জেরে নাকাল হন বহু যাত্রী। অনেক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকেও ঘুরপথে যেতে হয়। স্থানীয় দেবানন্দপুর পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
অভিভাবকদের দাবি, সামান্য টাকার বিনিময়ে ওই স্কুলে যথেষ্ট ভাল পড়ানো হচ্ছিল। হঠাৎ করে সেই স্কুল বন্ধ করা চলবে না। তৃণমূলের উপপ্রধান পীযূষ ধর বলেন, ‘‘আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ১৯৮৩ সালে স্থাপিত স্কুলটির কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তবুও পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কিছু করা যায় কি না, দেখছি।’’
স্কুলটি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ স্বীকৃত নয় বলে মানছেন প্রধান শিক্ষক সুবোধচন্দ্র দাস। পূর্ব রেলের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, ব্যান্ডেল স্টেশন চত্বরে রেলের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। জায়গা লাগবে। রেলের জমিতে কেউ অবৈধ নির্মাণ করে থাকতে পারেন না।
স্কুলটি চলছিল রেলের শরৎচন্দ্র ইনস্টিটিউটের (সেমিনার হল) চৌহদ্দিতে। রেলের আগে দেওয়া নোটিসের কথা স্বীকার করে সুবোধের দাবি, ‘‘ওই সেমিনার হল কমিটির সম্পাদক রেলকর্মী সুরজিৎ মণ্ডল বলেছিলেন, এ বছর স্কুল চালাতে। ওঁর (সুরজিৎ) কথাতেই স্কুল বন্ধ করা হয়নি।’’ সুবোধের দাবি উড়িয়ে সুরজিতের অভিযোগ, তাঁকে জড়ানোর চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, "আমরা (কমিটি) স্কুলটির উন্নয়নের কথা ভেবে কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। কেউ দেখাতে পারেনি। তাই আমরা আর এগোইনি।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক দশক আগে ব্যান্ডেল বাজারের ‘ব্যান্ডেল বিদ্যাপীঠ’ নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শরৎচন্দ্র ইনস্টিটিউটে স্কুলের মতো করে পড়ানো শুরু হয়। দেড় দশক পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই ইনস্টিটিউট ভবনের পিছনেই দোতলা স্কুল ভবন তৈরি হয়। তখন রেল বাধা দেয়নি বলেই দাবি স্থানীয়দের। মাসিক সামান্য টাকার (এখন ৩০০) বিনিময়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হত। প্রাথমিক পাঠের পরে শহরের নামজাদা সরকারি স্কুলগুলিতে সহজেই ভর্তি হতে পারত এখানকার পড়ুয়ারা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)