E-Paper

তাঁতঘরে কাজ বন্ধ ‘ইন্ডিয়া’য়

জানা গিয়েছে, অন্যান্য জুট মিলের মতো এখানেও আধুনিক যন্ত্র বসেছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁতঘরে কাজ কমানো হয়েছে। আবার নতুন যন্ত্র চালানো হচ্ছে বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক এনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ০৭:২৪
ইন্ডিয়া জুটমিল। নিজস্ব চিত্র

ইন্ডিয়া জুটমিল। নিজস্ব চিত্র

হুগলি জেলায় লোকসভা ভোট মিটতেই নতুন যন্ত্র নিয়ে অশান্তির আবহ শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুট মিলে। শ্রমিক-মালিক বিরোধে শনিবার থেকে কার্যত অচলাবস্থা এখানকার ‘তাঁতঘর’ বিভাগে। প্রত্যেক শ্রমিকের নিয়মিত কাজের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। পরিস্থিতির জন্য তারা মালিকপক্ষকে দায়ী করেছে। মালিকপক্ষ পাল্টা দুষছে শ্রমিকদের একাংশকে। সমস্যার সমাধানে আজ, মঙ্গলবার বৈঠকে বসছে শ্রম দফতর।

জানা গিয়েছে, অন্যান্য জুট মিলের মতো এখানেও আধুনিক যন্ত্র বসেছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁতঘরে কাজ কমানো হয়েছে। আবার নতুন যন্ত্র চালানো হচ্ছে বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক এনে। ফলে, কাজ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন অনেকেই। শ্রমিকেরা কাজ না করায় শনি ও রবিবার তাঁতঘরে কাজ হয়নি। এর জেরে মিলের আইএনটিটিইউসি সম্পাদক মহম্মদ তাহের-সহ চার শ্রমিককে ‘গেট বাহার’ করেন কর্তৃপক্ষ। তাতে ক্ষোভ বাড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের জেরে রবিবার বেলা থেকে সোমবার পর্যন্ত মিল বন্ধ রাখেন কর্তৃপক্ষ। আজ, মঙ্গলবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কি না, প্রশ্ন।

সোমবার বৃষ্টির মধ্যেই আইএনটিটিইউসি-র তরফে শ্রীরামপুরের ডেপুটি শ্রম কমিশনারের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। মিলে ওই সংগঠনের সভাপতি তথা শ্রীরামপুরের পুর-পারিষদ সন্তোষ সিংহ বলেন, ‘‘শ্রমিকদের কথা কর্তৃপক্ষ ভাবছেন না। সব শ্রমিককে কাজে নেওয়া হোক। নতুন যন্ত্র চালাতে প্রয়োজনে মিলের শ্রমিকদেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক। তাঁদের বদলে বাইরে থেকে শ্রমিক আনা হবে কেন?’’

শ্রম দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মঙ্গলবার এ নিয়ে বৈঠক করা হবে। সব পক্ষের সঙ্গেই আমরাকথা বলব।’’

সিআইটিইউ-র হুগলি জেলার সাধারণ সম্পাদক তীর্থঙ্কর রায়ের অভিযোগ, মালিকপক্ষই অচলাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি করছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলের আন্দোলন লোকদেখানো। রাজ্য সরকার তো ওদেরই। মালিকপক্ষকে ডেকে স্বাভাবিক ভাবে মিল চালাতে বলতে পারছে না সরকার! স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানো না হলে ফের আমরা আন্দোলনে নামব। সব শ্রমিককে কাজে নিতে হবে।’’

মিল কর্তৃপক্ষের দাবি, শনিবার সকালে কাজ চালু হতেই আচমকা তাঁতঘরের শ্রমিকরা বেরিয়ে যান। পরে আলোচনা দাবি করেন। কর্তৃপক্ষ জানান, পরের শিফটে কাজ চালু করে আলোচনা করা হবে। কিন্তু শ্রমিকরা পরের শিফটেও কাজ করেননি।

মিলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কত জন কাজ পাচ্ছেন না, সেই চাওয়া হয়েছিল। ওঁরা দিতে পারেননি।’’ তাঁর দাবি, নতুন যন্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ শ্রমিকরা নিতে চাইছেন না। ১৬ জনকে বেছে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও কাজের প্রতি তাঁদের অনীহা রয়েছে। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিক বা ঠিকশ্রমিক নিয়োগ নয়, উৎপাদনের স্বার্থে নতুন যন্ত্রে পারদর্শী শ্রমিক খুঁজে এনে কাজ চালানো হচ্ছে। মিলের শ্রমিকরা নতুন যন্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করলে তাঁরাই কাজ করবেন। বাইরে থেকে শ্রমিক আনার পক্ষপাতী আমরা নই।’’ তিনি বলেন, ‘‘তাঁতঘরের শ্রমিকরা কাজ না করায় অন্যান্য বিভাগেও প্রভাব পড়ছে। উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোকসানের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’’

লোকসভা ভোটের প্রচারপর্বে হুগলিতে জুটমিলের দুরবস্থা উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনের মুখেই। পরিস্থিতির জন্য মোদীদুষেছেন রাজ্য সরকারকে। মমতা দায়ী করেছেন দিল্লিকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Serampore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy