Advertisement
E-Paper

যেমন খুশি দর হাঁকছে শববাহী গাড়ি, অভিযোগ

অনেকেই অতিরিক্ত টাকা খরচ করে প্রিয়জনের দেহ সৎকারে বাধ্য হচ্ছেন।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২১ ০৬:১৭
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নার্সিংহোম থেকে কোভিড-মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য যেমন খুশি দর হাঁকা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। তাই শববাহী গাড়ির ক্ষেত্রে সরকার ভাড়া নির্দিষ্ট করুক, ফের এই দাবি তুলল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক (সিসিএন)।

সম্প্রতি উত্তরপাড়ার ঘড়িবাড়ি এলাকার এক বৃদ্ধার করোনা হয়। হাওড়ার বালির বাদামতলা এলাকার একটি নার্সিংহোমে গত রবিবার রাতে তিনি মারা যান। পরের দিন সকালে মৃতার ছেলে নার্সিংহোমে গেলে বলা হয়, আলমবাজারের একটি শ্মশানে দেহ সৎকার করা হবে। এক জনের ফোন নম্বর দেওয়া হয়। নার্সিংহোম থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া এবং সৎকারের খরচ ধরে ১৫ হাজার টাকা দর হাঁকেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। পরে ১১ হাজার টাকায় রফা হয়। ঠিক হয়, বিকেলে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে।

মৃতার ছেলে জানান, সারা বিকেল শববাহী গাড়ির লোক ফোন ধরেননি। সন্ধে সাড়ে ছ’টা নাগাদ ফোন ধরে বলেন, শ্মশানে ঝামেলার জন্য আটকে পড়েছেন। মৃতার ছেলের বন্ধুরা সেখানে গিয়ে দেখে, সত্যিই কোনও সমস্যা হয়েছে। বেশ কয়েকটি মৃতদেহ জমে রয়েছে। মৃতার ছেলে পরিচিত এক শববাহী গাড়ি-চালককে ফোন করেন। কিন্তু তিনি জানান, কোভিড-মৃতদেহ তিনি নিতে পারবেন না। এ জন্য গাড়ি নির্দিষ্ট।

উপায়ান্তর না-দেখে মৃতার ছেলে সিসিএন-এর হুগলি শাখার সদস্য তাপস নস্করের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাপসবাবু শ্রীরামপুর মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তরপাড়া পুরসভার এক ব্যক্তির ফোন নম্বর পান। তিনি আবার আর এক জনের নম্বর দেন। ওই ব্যক্তি জানান, উত্তরপাড়ার শিবতলা শ্মশানে দেহ সৎকার করা হবে। ১৫ হাজার টাকা লাগবে। বিষয়টি
জেনে তাপসবাবু উত্তরপাড়া পুরসভার সংশ্লিষ্ট এক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি
জানান, ৪ হাজার টাকাতেই সব
কাজ হবে।

মৃতার ছেলে বলেন, ‘‘ওই আধিকারিকের কথা মেনেও আমাকে বলা হয়, আর দু’হাজার টাকা বেশি, অর্থাৎ, ৬ হাজার টাকা দিতে হবে। সারা দিনের হয়রানির পরে তখন রাত হয়ে গিয়েছে। ছ’হাজার টাকাই দিই।’’

গভীর রাতে বৃদ্ধার মৃতদেহ শিবতলা শ্মশানে দাহ করা হয়। শ্মশান-খরচ এক হাজার টাকা লাগে (এই দর নির্দিষ্ট)। মৃতার ছেলে জানান, ডোমেদের আব্দারে আরও দু’হাজার টাকা দিতে হয়। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার টাকা তাঁর খরচ হয়।

মৃতার ছেলে বলেন, ‘‘মানুষের অসহায়তার সুযোগে যেমন খুশি দর হাঁকা হচ্ছে। বালি থেকে আলমবাজার অথবা উত্তরপাড়া দু’টি ক্ষেত্রেই ১৫ হাজার টাকা চাওয়া হল। আলমবাজারের ক্ষেত্রে পরে ৪ হাজার টাকা কমানো হয়। আর সিসিএন মারফত উত্তরপাড়া পুরসভায় যোগাযোগের পরে বোঝা গেল টাকার অঙ্কটা কত বেশি চাওয়া হচ্ছিল। শেষমেষ অবশ্য হ্যাপা এড়াতে আরও কিছুটা বেশি টাকা দিয়েছি।’’

তাপসবাবু বলেন, ‘‘প্রিয়জনকে হারানোর পরে মানুষকে এমন আর্থিক ও মানসিক হয়রানির শিকার কেন হতে হবে? সরকার এই টাকা বেঁধে দিক। না হলে তো এমন মৌরসিপাট্টা চলতেই থাকবে।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি হাসপাতালে করোনায় কেউ মারা গেলে বাড়ির লোক কোভিড-বিধি মেনে দাহ করতে চাইলে দেহ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। না হলে, সরকারি ভাবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে দাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতালে সেই সুযোগ নেই। বেসরকারি সংস্থার উপরে তাঁদের নির্ভর করতে হচ্ছে। অনেকেই অতিরিক্ত টাকা খরচ করে প্রিয়জনের দেহ সৎকারে বাধ্য হচ্ছেন।

COVID-19 coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy