করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্ব জুড়ে চলছে টিকাকরণ। কিন্তু সেই বিজ্ঞানে তেমন আস্থা নেই গোঘাটের পশ্চিম ফলুই গ্রামের মহামায়া মন্দিরের ৬০ ঘর সেবাইতের। তাঁদের ধারণা, যজ্ঞতেই হবে করোনা-মুক্তি। আর সেই
ধারণার বশেই বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল পর্যন্ত এই যজ্ঞ এবং পুজোপাঠ চলল গ্রামের মন্দিরে। করোনা বিধির কোনও তোয়াক্কা না করেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই যজ্ঞের দায়িত্ব ছিলেন গ্রামেরই ব্রাহ্মণপাড়ার ২৫ জন ব্যক্তি। তাঁরা সারা দিন পুজোপাঠ করেছেন। এ দিন যজ্ঞ দেখতে হাজির হয়েছিলেন গ্রামের অনেক মানুষ। তাঁদের অধিকাংশই মাস্ক পরেননি। মানা হয়নি দূরত্ব বিধিও। উদ্যোক্তাদের অন্যতম মহাদেব সাহানার কথায়, ‘‘আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। সেই বিশ্বাস থেকেই এই আয়োজন। কোভিড বিধি মানার প্রশ্ন ওঠেনি কারও মনে।’’
ব্রাহ্মণদের মধ্যে অভিজিৎ চক্রবর্তী নামে একজনের কথায়, “সমস্ত দেবদেবীর পুজোর বিশেষ মন্ত্রপাঠ হয়েছে। শেষে হোম করে সবাইকে হোমের টিকা দিয়ে গঙ্গাজল ছিটানো হয়েছে।’’ কিন্তু এরপর যদি সংক্রমণ ছড়ায়, তা হলে কী হবে? জবাব মেলেনি। স্থানীয় বদনগঞ্জ-ফলুই-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষাল স্বীকার করেছেন, “কোভিড বিধি না মেনে এই যজ্ঞ আয়োজনটা অন্যায় হয়েছে। এতে উপকারের বদলে অপকার হওয়ার সম্ভবনা থেকে যাচ্ছে।’’
এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের আরামবাগ মহকুমা শাখার সম্পাদক নবকুমার মণ্ডল বলেন, “বিজ্ঞানের যুগে মানুষ আজও এমন অন্ধকারে পড়ে রয়েছে। এই যজ্ঞ করে করোনা থেকে মুক্তি মিলবে না কখনও। বিজ্ঞানীরাও এখনও পথের সন্ধান করে চলেছেন। এই সব কুসংস্কার বা ভাবনার পরিবর্তনে আমরা প্রচারও চালাচ্ছি। এই বিষয়টারও খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
রাজ্যে আগামী ১৫ তারিখ পর্যন্ত সব রকম জমায়েতে বিধি-নিষেধ জারি হয়েছে। সেখানে যজ্ঞে এমন লোক-সমাগম হল কী করে? পুলিশের অবশ্য দাবি, এমন সমাগমের কোনও খবর তাদের কাছে ছিল না। এর পরে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা তারও কোনও স্পষ্ট জবাব তাদের কাছ থেকে মেলেনি।