E-Paper

রক্তের অভাব হুগলির সর্বত্র

জেলা সদর ইমামবাড়া হাসপাতালে গত তিন মাস এই পরিস্থিতি। বিশেষত লোহিত রক্তকণিকার অভাব। সঙ্কট চন্দননগর হাসপাতালেও।

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩ ০৯:৫৮
চাহিদা: আরামবাগ হাসপাতালের ব্লাড সেন্টারে রক্তের অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র

চাহিদা: আরামবাগ হাসপাতালের ব্লাড সেন্টারে রক্তের অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র kamarpukursanjib@gmail.com

প্রথমে গরম। তার পরে পঞ্চায়েত ভোট। এই দুইয়ের জেরে হুগলির ব্লাড সেন্টারগুলিতে রক্তের আকাল ছিলই। ভোট মিটলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।

বিভিন্ন ব্লাড সেন্টার সূত্রে খবর, গরমে এমনিতেই রক্তদান শিবির কম হয়েছে। তার উপরে পঞ্চায়েত ভোটে নির্বাচনী বিধির কারণে রাজনৈতিক দলগুলি শিবির করতে পারেনি। গ্রামগঞ্জে অন্যান্য শিবিরও কম হয়েছে। জোগান কমেছে। ভোটের পরে শিবিরের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে তা পর্যাপ্ত নয়।

জেলা সদর ইমামবাড়া হাসপাতালে গত তিন মাস এই পরিস্থিতি। বিশেষত লোহিত রক্তকণিকার অভাব। সঙ্কট চন্দননগর হাসপাতালেও। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘সাধারণত জুলাইতে ভোট হয় না। এ বার হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে।’’

শ্রীরামপুর ওয়ালশে মাসে গড়ে ১৫-২০টি শিবির হয়। এখন হচ্ছে গোটা দশেক। ‘রক্তাল্পতা’ মানছেন কর্তৃপক্ষ। সুপারিন্টেন্ডেন্ট প্রণবেশ হালদার জানান, রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় রক্তদাতা আনতে বলতে হচ্ছে। দিন কয়েক আগে এক রোগীর ‘এ নেগেটিভ’ রক্তের দরকার ছিল। হুগলি, কলকাতায় যোগাযোগ করেও মেলেনি। এক দিন পরে ওই গ্রুপের দাতা জোগাড় করে ব্যবস্থা হয়।

আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড সেন্টার সূত্রের খবর, বেশির ভাগ রোগীর আত্মীয়দের রক্তদাতা আনতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে দেখা গেল, ব্লাড সেন্টারের সামনে রোগীর আত্মীয়দের ভিড়। সঙ্গে জনা কুড়ি রক্তদাতা।

ওই ব্লাড সেন্টারের মেডিক্যাল অফিসার গৌরাঙ্গ সরকারের বক্তব্য, মেডিক্যাল কলেজ হওয়ার পরে এই হাসপাতালে শয্যা অনেক বেড়েছে। রক্তের চাহিদা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। সাধারণত মাসে গড়ে ২৫টি শিবির হয়। গত দু’মাসে ১৬-১৮টি করে হয়েছে। দৈনিক গড়ে ৪৫-৫০ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়। গত দু’মাস ধরে তা ২০-২৫ ইউনিটে ঠেকেছে। প্রতিদিন ১২-১৫ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ভর্তি হন। তাঁদের রক্তের জোগানের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে তাঁর আশ্বাস, ‘‘বিভিন্ন ক্লাব-সংগঠন শিবিরের আবেদন জানাচ্ছে। সমস্যা থাকবে না।’’

যদিও, স্থানীয় নার্সিংহোমে ভর্তি আত্মীয়ার জন্য এ দিন এখানে রক্ত নিতে আসা গোঘাটের তরুণ দাসের দাবি, ‘‘রক্তের আকাল প্রায় সারা বছরই থাকছে।’’ একই বক্তব্য সেখানে অপেক্ষমাণ খানাকুলের শ্রীমন্ত দোলুই, আরামবাগের মলয়পুরের শেখ সাকিমদের। ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ রায় জানান, রক্তদান শিবির করা নিয়ে মানুষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ৫৮৪ শয্যার এই হাসপাতাল ছাড়াও মহকুমার প্রায় ৫০টি নার্সিংহোম, সংলগ্ন হাওড়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুরের একাংশও এই ব্লাড সেন্টারের উপরে নির্ভরশীল।

শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের ব্লাড সেন্টারে হুগলি-সহ আশপাশের জেলার বহু রোগীর রক্তের চাহিদা মেটে। জোগানের অভাবে অনেককেই ফিরে যেতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানান, গত রবিবার তিনটি শিবির মিলিয়ে ১৪৬ ইউনিট রক্ত সংগৃহীত হয়। কয়েক ইউনিট ‘বি পজ়িটিভ’ বাদে বুধবার সকালের মধ্যেই বাকি রক্ত কার্যত নিঃশেষ। ঘাটতি মূলত লোহিত রক্তকণিকার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Blood Crisis Hooghly

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy