Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
crops

Summer: হলুদ হচ্ছে ফসল, মরে যাচ্ছে মাছ

বৃষ্টির দেখা নেই। গরমে হুগলি জেলার আনাজ আর মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রোদের তেজে ফসল নষ্ট হচ্ছে। জলাশয়ে জল কমছে। মরে যাচ্ছে মাছ।

শুকিয়ে যাচ্ছে চিচিঙ্গা গাছ। গোঘাটের পশ্চিম পাড়ায়।

শুকিয়ে যাচ্ছে চিচিঙ্গা গাছ। গোঘাটের পশ্চিম পাড়ায়। নিজস্ব চিত্র।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  ও পীযূষ নন্দী
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২২ ০৭:০১
Share: Save:

বৃষ্টির দেখা নেই। গরমে হুগলি জেলার আনাজ আর মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রোদের তেজে ফসল নষ্ট হচ্ছে। জলাশয়ে জল কমছে। মরে যাচ্ছে মাছ।

আনাজ চাষিদের দাবি, এর জেরে ফলন কমে আনাজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর মাছচাষিরা জানাচ্ছেন, জল কমে যাওয়ায় অনেক অপুষ্ট মাছও তুলে ফেলতে হচ্ছে। সেগুলি বিকোচ্ছে কম। অন্য জেলা থেকে মাছ কিনে এনে বিক্রির ফলে এখানকার ক্রেতাদের পকেটেও টান পড়ছে।

এখন হুগলির চাষের জমিতে গরমের আনাজ ছাড়া রয়েছে বোরো ধান, পাট, তরমুজ এবং বাদামের মতো ফসল। পুরশুড়ার ব্লকের কেলেপাড়ার চাষি বাপ্পাদিত্য ধোলের কথায়, ‘‘পটল, ঝিঙে-সহ সব ফসলে পরাগ মিলনে সমস্যা হচ্ছে। তার ফলে ফলন হচ্ছে না। দু’দিন অন্তর সেচ দিয়েও ফসল রক্ষা করা যাচ্ছে না।’’ তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙার চাষি অষ্ট মালিকের অভিযোগ, “বেগুন গাছ ঝিমিয়ে যাচ্ছে। পটল হলুদ হয়ে ঝরে যাচ্ছে।” পাশাপাশি রোগ-পোকার উপদ্রবও বাড়ছে বলে দাবি চাষিদের।

গরমে সেচের জলই চাষের অন্যতম সহায়ক। অন্যান্য বছর এপ্রিল মাসের শেষে জেলার নদীগুলিতে জলের অভাব এতটা হয় না। তার ফলে আরএলআই (রিভার লিফ্ট ইরিগেশন) কেন্দ্রগুলি থেকে সেচে জলের জন্য সমস্যা হয় না। কিন্তু এ বার পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা। তারকেশ্বরের রামনগরের চাষি অনুপ ঘোষ বলেন, ‘‘বোরো ধানের জন্য ডিভিসি নদীতে জল ছাড়ায় এখনও আরএলআই কেন্দ্রগুলি চালু আছে। তবে, আরও কয়েকদিন এই রকম আবহাওয়া থাকলে জলস্তর নেমে যাবে।’’ একই সুর জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তীর গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘এই দাবদাহ চলতে থাকলে ফসলের ক্ষতি তো হবেই। এখনও পর্যন্ত সেচের জল চালু রাখা যাচ্ছে। তবে যা গরম, কতদিন সেটা মিলবে, সেটাই সংশয়।’’

কৃষি দফতরের হিসাবে, এ বার বোরো চাষের মোট এলাকা ছিল ৫৫ হাজার ১৭০ হেক্টর। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ জমির ধান কাটার মুখে বা কাটার কাজ চলছে। বোরো ধান ঘরে তুলতে এই আবহাওয়া চাষিদের অনুকূল। জেলায় গরমের মরসুমে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আনাজ চাষ হয়। এখনও পর্যন্ত সেই পরিমাণটা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ন’হাজার হেক্টরে। জেলা কৃষি আধিকারিক প্রিয়লাল মৃধা জানান, এই দাবদাহে মূলত মার খাচ্ছে গরমের আনাজ, বাদাম, তিল, পাট ও ডালশস্য।

মাছ চাষের ক্ষেত্রে কোনও জলাশয়ের জলই শুকিয়ে গিয়েছে। কোথাও জল কমছে। খানাকুলের ধান্যগোড়ির মাছচাষি কৃষ্ণেন্দু পাত্রের অভিযোগ, “২৫টা পুকুর লিজ় নিয়ে মাছ চাষ করেছি। প্রতি বছর গরমে সমস্যা হয়। কিন্তু জলের জোগান হয়ে যায়। এ বার সেটা মিলছে না। কোথাও জল শুকিয়ে, কোথাও জল গরম হয়ে মাছ মরছে।’’ অনেক এলাকায় পুকুরের জল কমে যাওয়ায় জেলেরা অপুষ্ট মাছও তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

এই ক্ষতির ধাক্কা লাগছে মাছের বাজারেও। উত্তরপাড়া বাজারে চন্দননগর, ডানকুনি এবং চণ্ডীতলা এলাকা থেকে জ্যান্ত রুই-কাতলা আসে। উত্তরপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘গরমে জ্যান্ত মাছের চাহিদা তো আছে। কিন্তু জোগান কই? পূর্ব মেদিনীপুরে ভেড়ির মাছই ভরসা। রাত থাকতে মেচেদায় গিয়ে মাছ আনতে হচ্ছে। ফলে, মাছের দামও বাড়ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

crops Fishes Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE