Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Teacher's Day

বিদ্যালয়ের ‘সম্পদ’, সম্মান মাস্টারমশাইকে

নিজের গ্রামের স্কুলটিতে গত পঁচিশ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কখনও শিক্ষক, কখনও বাগানের মালি, কখনও আবার ঝাড়ুদার হিসাবে পরিষেবা দেন প্রবীর। এলাকার মানুষ তাঁকে ‘মাস্টার মশাই’ বলেই ডাকেন।

প্রবীরকে সম্মান পড়ুয়াদের।

প্রবীরকে সম্মান পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

পীযূষ নন্দী
গোঘাট শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০১
Share: Save:

তিনি সরকারি হিসেবে শিক্ষক নন। তবু হুইল চেয়ারে বা হামাগুড়ি দিয়ে চলা গোঘাটের চাতরা গ্রামের প্রবীরকুমার পালকে প্রতি বছর শিক্ষক দিবসে সম্মানিত করেন গ্রামের প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং বাসিন্দারা। তিনিও প্রতি বছর নিয়ম করে নিজের গ্রামের এবং পাশাপাশি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে গাছের চারা রোপণ করতে যান। এ বছর তিনি নিজের গ্রামের স্কুলের বাগান সাফাই করলেন।

নিজের গ্রামের স্কুলটিতে গত পঁচিশ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কখনও শিক্ষক, কখনও বাগানের মালি, কখনও আবার ঝাড়ুদার হিসাবে পরিষেবা দেন প্রবীর। এলাকার মানুষ তাঁকে ‘মাস্টার মশাই’ বলেই ডাকেন। গ্রামের স্কুলে শিক্ষককের অভাব ঘোচাতে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বিভূতি সামুই গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে ১৯৯৮সাল নাগাদ প্রবীরকে পঠনপাঠনে সাহায্য করতে বলেন। উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করা প্রবীর তখন থেকেই সেখানে পড়াচ্ছেন। পরে ২০০৬ সালে ৪ জন শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার পরেও প্রবীরের প্রয়োজন ফুরোয়নি।

বছর আটচল্লিশের প্রবীর সকাল ৯টায় হুইল চেয়ার নিয়ে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে চলে আসেন। তাঁরই হাতে তৈরি ফুলের বাগান এবং আনাজ বাগান পরিচর্যা করেন। তাঁর উদ্যোগেই স্কুলে প্রার্থনার আগে সেই বাগানে পড়ুয়ারা জল দেয়। আনাজ চাষে স্কুলের মিড মিলের ঘাটতি কিছুটা কমেছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি। প্রতি দিন স্কুলে প্রার্থনাও করান তিনি। তারপরে মিনিট দশেক স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণের কাহিনী এবং বাণী পাঠ করান।

স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক রাজকুমার ঘোষ বলেন, “প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে গ্রামে শিক্ষা এবং পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে প্রবীর অনন্য এক নজির গড়ে চলেছেন। একই সঙ্গে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিকাশের পাঠও দিয়ে চলেছেন। অন্য বছরের মতোই শিক্ষক দিবসে তাঁকে সম্মান জানানো হয়েছে।”

প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন নিয়ে প্রবীরের সক্রিয়তায় স্থানীয় মানুষ চাঁদা তুলে ২০০১ সালে তাঁকে একটি হুইল চেয়ার দেন। বছর কয়েক আগে গোঘাট থানা থেকে তাঁকে একটি মোবাইল ফোনও দেওয়া হয়। প্রবীর বলেন, “আমার কারও কাছে কিছু দাবি নেই। কাজ করতে ভাল লাগে। প্রতিবন্ধকতা আমাকে কাবু করতে পারেনি, পারবেও না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher's Day Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE