নিজেদের জমি থেকে জবরদখল উচ্ছেদে জোরদার অভিযান চালাচ্ছে রেল। হুগলিতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং স্টেশন চত্বরে বিনা অনুমতিতে চলা গুমটি বা অন্যান্য দোকানপাট তুলে ফেলা হয়েছে। উপায়ান্তর না দেখে অনেকে নিজেরাই দোকান সরিয়ে নিয়েছেন। বাঁশবেড়িয়ায় নিজেদের জমি থেকে বসতি উচ্ছেদের প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের নোটিসে চিন্তায় বাসিন্দারা। পুনর্বাসন ছাড়া তাঁরা সরতে নারাজ।
বাসিন্দাদের দাবির তোয়াক্কা অবশ্য রেল করছে না। তারা বলছে, উচ্ছেদ করা হচ্ছে আইন মোতাবেক। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্তের বক্তব্য, ‘‘রেলের জমি যাঁরা দখল করে আছেন, তাদের সেই জায়গা ফাঁকা করতে নোটিস দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের স্বার্থেই এই পদক্ষেপ। জমি দখলমুক্ত করতে রেল বদ্ধপরিকর।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁশবেড়িয়া স্টেশনের পাশেই এক নম্বর রেলগেট লাগোয়া অবনী পল্লিতে রেললাইনের ধারে বহু বছর ধরেই বসতি গড়ে উঠেছে। জায়গাটি বাঁশবেড়িয়া পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ৫২টি পরিবারের বাস এখানে। একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে। রেলের তরফে গত ১২ মে নোটিস দিয়ে আগামী ৩ জুনের মধ্যে বাসিন্দাদের উঠে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এখানকার বাসিন্দা রবীন দাস, কৃষ্ণ দাস, সাগর মণ্ডলেরা ট্রেনে হকারি করেন। তাঁরা জানান, স্বল্প রোজগারে কোনও রকমে দিন গুজরান হয়। অন্যত্র ঘর করার সামর্থ্য নেই। ফলে, হঠাৎ করে সরতে বলা হলে তাঁরা মাথা গুঁজবেন কোথায়! তাই তাঁরা পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন। রেলের নোটিস পেয়ে তাঁরা স্থানীয় পুরসদস্য শর্মিলা মজুমদারের দ্বারস্থ হন।
শর্মিলা বলেন, ‘‘পরিবারগুলি ৫০ বছরে বেশি সময় ধরে এখানে রয়েছেন। সবাই নিম্নবিত্ত। পুনর্বাসন না দিলে সমস্যায় পড়বেন। পুরপ্রধানকে জানিয়েছি।’’ পুরপ্রধান আদিত্য নিয়োগী জানান, পুনর্বাসনের ব্যাপারে রেলের সঙ্গে সমন্বয়ের আর্জি জানিয়ে গত ১৫ মে পুরসভার তরফে জেলাশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
শর্মিলা-সহ কয়েক জন তৃণমূল পুরসদস্য, জেলা পরিষদের সদস্য মানস মজুমদার, শর্মিলার স্বামী তথা দলের স্থানীয় নেতা পার্থ ঘোষ প্রমুখ বুধবার সন্ধ্যায় ওই এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। মানস বলেন, ‘‘ওঁরা বলেছেন, ছাদ বাঁচানোর জন্য লড়াই করবেন। আমাদের সরকার পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদের বিপক্ষে। তাই আমরা ওঁদের পাশে থেকে আন্দোলন করব। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে সংগঠিত করা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)