চালু হওয়ার পরে প্রায় দু’মাস কেটে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও হাওড়া শহরে বেআইনি টোটোর নথিভুক্তি (এনরোলমেন্ট) খুবই কম হওয়ায় সমস্যায় পড়েছে জেলা পরিবহণ দফতর। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, হাওড়া শহরে যেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি টোটো চলে, সেখানে মাত্র ১৬ হাজার ১৭৪টি আবেদন জমা পড়েছে বলে খবর। অন্য দিকে, সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির কাছ থেকে কেনা ই-রিকশার মালিকেরা নম্বর প্লেট নেওয়ার খরচ বাঁচাতে টোটো নথিভুক্তির শংসাপত্র নিয়েই ই-রিকশা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যার জেরে সমস্যায় পড়েছে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। বেআইনি টোটোর দৌরাত্ম্যে লাগাম টানতে রাজ্য পরিবহণ দফতর যে পরিকল্পনা করেছে, ই-রিকশার মালিকদের এই প্রবণতায় তা ধাক্কা খেতে পারে বলে মনে করছেন দফতরের কর্তারা।
বেআইনি টোটো নথিভুক্ত করার জন্য রাজ্য পরিবহণ দফতর গত ১০ অক্টোবর থেকে নথিভুক্তির আবেদনপত্র ও ফি জমা নিতে শুরু করেছে। প্রথম পর্যায়ে এই কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ৩০ নভেম্বর। যদিও দেখা যায়, অধিকাংশ বেআইনি টোটোর মালিকই পরিবহণ দফতরে টোটো নথিভুক্ত করাতে রাজি নন। এর পরে রাজ্য সরকার আরও এক মাস, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়াতে বাধ্য হয়। কিন্তু তার পরেও দেখা যাচ্ছে, নথিভুক্তির জন্য আবেদনের সংখ্যা ২০ হাজারেও পৌঁছয়নি। অথচ, পুলিশের দেওয়া তথ্যই বলছে, হাওড়া শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি টোটো চলে। তবে ওই সময়সীমা ফের বাড়তে চলেছে।
এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে অন্য সমস্যা। দেখা যাচ্ছে, ই-রিকশার মালিকেরা টোটো নথিভুক্তির পোর্টালে (টিটিইএন) গিয়ে আবেদন করে মোটর ভেহিক্ল দফতরের শংসাপত্র পেয়ে যাচ্ছেন। সেটি তাঁরা নিজেদের ই-রিকশায় লাগিয়ে দিচ্ছেন। যার ফলে টোটো আর ই-রিকশা একই ভাবে সরকারি খাতায় নথিভুক্ত হচ্ছে। হাওড়া আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ই-রিকশার মালিকেরা এটা না বুঝে করছেন, না কি মোটর ভেহিক্লস দফতরের নম্বর প্লেটের জন্য যে ১৪-১৫ হাজার টাকা খরচ হবে, তা এড়াতে করছেন, বুঝতে পারছি না। তবে, এর ফলে চাল আর ডাল আলাদা করার মতো সমস্যা হচ্ছে।’’
এমনিতে ই-রিকশা আর টোটোর মধ্যে গঠনগত ফারাক খুব বেশি নেই। ই-রিকশা মূলত ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অটোমেটিভ টেকনোলজি’ (আইক্যাট) স্বীকৃত যান। আর টোটো স্থানীয় ভাবে তৈরি যান। দু’টিই চলে রিচার্জযোগ্য ব্যাটারিতে। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, টোটো নথিভুক্তির পরে আগামী ছ’মাসের জন্য ১৬৪৫ টাকা ও এক বছরের জন্য ২৮৪৫ টাকা ফি নেওয়া শুরু করেছে মোটর ভেহিক্লস দফতর। এক বছর পরে এই যানগুলি বাতিল হয়ে যাবে এবং সেই জায়গায় ই-রিকশা পথে নামবে। তখন প্রতিটি ই-রিকশার জন্য মোটর ভেহিক্লসদফতরে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নম্বর প্লেট নিতে হবে।
হাওড়া আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ই-রিকশার মালিকেরা টিটিইএন-এ নথিভুক্তির শংসাপত্র গাড়িতে লাগিয়ে পথে বেরোনোয় বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, কোন গাড়িটি বৈধ আর কোনটি নয়। এই কারণে অবিলম্বে ই-রিকশার মালিকদের মোটর ভেহিক্লস দফতরে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নম্বর প্লেট নিতে বলা হয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)