Advertisement
E-Paper

চুন-বালি-গুড়ের মিশ্রণে প্রাণ পাচ্ছে ইমামবাড়ার ‘উইল’

মুছে যাওয়া ১৭০ বছরের পুরনো হরফের রূপ ফেরাতে ব্যবহার করা হচ্ছে চুন, বালি এবং চিটেগুড়। ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষের দাবি, এই সামগ্রীই সেই সময় ব্যবহারকরা হয়েছিল।

সুদীপ দাস

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪৪
ইমামবাড়ার গায়ে প্রাচীন হরফ সংস্কারের কাজ চলছে। শিল্পী শেখ সামসের (ডান দিকে)। ছবি: তাপস ঘোষ

ইমামবাড়ার গায়ে প্রাচীন হরফ সংস্কারের কাজ চলছে। শিল্পী শেখ সামসের (ডান দিকে)। ছবি: তাপস ঘোষ

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় হুগলির ইমামবাড়ার। হাজি মহম্মদ মহসিনের রেখে যাওয়া অর্থে ১৮৬১ সালে গড়ে ওঠে এই স্থাপত্য। গঙ্গার দিকে ইমামবাড়ার দেওয়ালে পার্সি ও ইংরেজি হরফে লেখা ‘উইলে’ সে কথা বর্ণিত রয়েছে। কিন্তু বয়সের ভারে খোদাই করা সেই হরফ চাঙড়ের সঙ্গে খসে পড়ছিল। সেই হরফ পুনরুদ্ধারে নেমেছেন ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ। মাস চারেক ধরে চলছে কাজ।

মুছে যাওয়া ১৭০ বছরের পুরনো হরফের রূপ ফেরাতে ব্যবহার করা হচ্ছে চুন, বালি এবং চিটেগুড়। ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষের দাবি, এই সামগ্রীই সেই সময় ব্যবহারকরা হয়েছিল। নিয়ম মেনেহেরিটেজ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই স্থাপত্যের পুরনো শৈলী বজায় রাখতে নির্মাণ সামগ্রী অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। হেরিটেজ কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে এই কাজ চলছে। কাজটি করছেন বছর তিরিশের স্থানীয় যুবক শেখ সামসের।

সামসের জানান, একটি চৌবাচ্চায় ২৪ টিন বালির সঙ্গে ২৪ কেজি চিটেগুড় এবং ৮ টিন চুন অল্প জলদিয়ে মিশিয়ে রেখে দেওয়া হয়। দিন পঁচিশ পরে সেই মিশ্রণ দেওয়ালে লেপা হয়। তার পরে ছুরি দিয়ে কেটে অক্ষর তৈরি করা হয়। কয়েকঘণ্টার মধ্যে জমাট বেঁধে রূপ ফিরছে হারানো হরফের।

ইমামবাড়া সূত্রের খবর, এই উইল পুনরুদ্ধারে তারা অনেক দিন আগেই উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু, খসে পড়া পার্সি অক্ষর বুঝতে না পারায় সমস্যা হচ্ছিল। সেই সব অক্ষর চিনতে এক ইরানির সহযোগিতা নেওয়া হয়।

সামসের বলেন, ‘‘অত্যন্ত সুক্ষ্ম কাজ। ইংরেজি হরফ চিনি। পার্সি চিনি না। মশলার মিশ্রণ দেওয়ালে লেপে, কর্তৃপক্ষের দেওয়া নকশা দেখে পার্সি হরফ খোদাই করছি। কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগবে।’’

ওই যুবক আরও জানান, বছর কয়েক আগে মুর্শিদাবাদ থেকে তাঁর জামাইবাবু গয়েশ মল্লিক এখানে এসেছিলেন ইমামবাড়ার সংস্কারের কাজে। সেই সময় গয়েশের সহযোগী হিসাবে তিনি কাজ করেছিলেন। তখনই চুন, বালি, চিটেগুড় দিয়ে কলকা তৈরির কাজ রপ্ত করে ফেলেন। এমন ঐতিহাসিক জায়গায় এই কাজ করতে পেরে সামসের আহ্লাদিত।

সারা বছর ধরে বহু পর্যটক ইমামবাড়ায় আসেন। এর দেওয়ালে খোদাই করা উইল পুনরুদ্ধারের কাজে খুশি চুঁচুড়াবাসী। আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘শুধু তো উইল নয়, ওটা একটা শিল্পকলা। একটা নিদর্শন। সেটির পুরনো চেহারা ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, খুব ভাল লাগছে।’’

Imambara Chinsurah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy