অভিযোগ উঠেছিল, হাওড়া সদর মহকুমা শাসকের দফতর থেকে দেওয়া হচ্ছে জাল তফসিলি জাতি শংসাপত্র। হাওড়ার নগরপালের নির্দেশে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করে এর তদন্ত শুরু করে দেখা গেল, ওই এসডিও দফতর ঘিরে তৈরি হয়ে গিয়েছে জাল জাতিগত শংসাপত্র দেওয়ার একটি আস্ত চক্র! ঘটনার তদন্তে নেমে দুই মহিলা-সহ পাঁচ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের ধারণা, এই চক্রের জাল ছড়িয়ে রয়েছে হাওড়ার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলাতেও। তাই গ্রেফতারির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
পুলিশ জানিয়েছে, বছর দুয়েক আগে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করার অভিযোগে পূর্ণিমা সাহা নামে এক মহিলার বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বাসিন্দা, তমোঘ্ন দাস নামে এক ব্যক্তি। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পূর্ণিমা তাঁর একটি তফসিলি জাতি শংসাপত্র পেশ করেন। দেখা যায়, সেই শংসাপত্রটি হাওড়া সদর মহকুমা শাসকের দফতর থেকে বার করা হয়েছে। কিন্তু অশোকনগরের বাসিন্দা পূর্ণিমা কী ভাবে হাওড়া থেকে ওই শংসাপত্র তৈরি করালেন, এই প্রশ্ন তুলে হাওড়ার মহকুমা শাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান তমোঘ্ন। পাশাপাশি, তথ্য জানার অধিকার আইনেও বিষয়টি জানতে চান তিনি। তাতেই ধরা পড়ে, জাতি শংসাপত্র বার করতে নথি হিসাবে ভুয়ো ভোটার কার্ডে হাওড়ার বনবিহারী ঘোষ লেনের ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন পূর্ণিমা।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পূর্ণিমা একা নন, ওই একই ঠিকানা ব্যবহার করে আরও তিন জনকে জাল জাতিগত শংসাপত্র বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন, কেউ উত্তর ২৪ পরগনার বা পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা হলেও তাঁর ভোটার কার্ডে রয়েছে হাওড়ার ঠিকানা। অথচ, হাওড়ার ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। তদন্তে প্রমাণিত হয়, হাওড়ার কয়েকটি নির্দিষ্ট ঠিকানা ব্যবহার করে বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের খোদ হাওড়া সদর মহকুমা শাসকের দফতর থেকেই তফসিলি জাতি শংসাপত্র তৈরি করে দেওয়া হচ্ছিল।
পুলিশ জানায়, এই অভিযোগ হাওড়ার সদর মহকুমা শাসকের কাছে পৌঁছলে তাঁর নির্দেশে হাওড়া থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়। কিন্তু প্রায় দেড় বছর কেটে যাওয়ার পরেও তদন্তে কোনও অগ্রগতি বা গ্রেফতারি না হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশনের কাছে ফের অভিযোগ জানান তমোঘ্ন। এর পরেই ওই কমিশনের নির্দেশে হাওড়া সিটি পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল পদমর্যাদার এক কর্তার নেতৃত্বে চার জনের বিশেষ দল (সিট) গঠন করা হয়। তদন্তে নেমে চলতি মাসেই বিভিন্ন সময়ে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে দুই মহিলা-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরেই হাওড়া সদর মহকুমা শাসকের অফিস থেকে ভুয়ো তফসিলি শংসাপত্র বার করানো হচ্ছিল। এতে নিচুতলার একাধিক কর্মী যুক্ত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। দালালদের মাধ্যমে ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বানিয়ে দেওয়া হচ্ছিল এই জাল জাতি শংসাপত্র।’’ ওই পুলিশকর্তা আরও জানান, এই জাল শংসাপত্র বানাতে প্রতি ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হচ্ছিল হাওড়ার ঠিকানা বসানো ভুয়ো ভোটার কার্ড। তদন্তকারী দলের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘দ্রুত তদন্ত চলছে। এখনও পর্যন্ত সাতটি ঘটনা ধরা পড়েছে। একটি বড় চক্র এর পিছনে কাজ করছিল। চক্রের সঙ্গে যুক্ত এক দালালকেও উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ধরা হয়েছে। আরও অনেককেই গ্রেফতার করা হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)