হিমঘর থেকে বের করার পর বস্তাবন্দি করা হচ্ছে আলু। নিজস্ব চিত্র
মাসদুয়েক ধরে বাজারে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। চড়া দাম নিয়ে সাধারণ মানুষ নাজেহাল। তার মধ্যে আলুর মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ক্রেতা-বিক্রেতা— উভয়েই মানছেন, নিয়মিত কালো, দাগি আর পচা আলু আসছে বাজারে। প্রতি কেজিতে খারাপ মানের কিছু আলু মিশে থাকছে। উঠছে নজরদারির প্রশ্নও।
কেন এই পরিস্থিতি?
এর পিছনে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীকেই দায়ী করেছেন বাজারের সাধারণ বিক্রেতারা। তাঁদের মতে, গত আলুর মরসুমের শুরুতেই পর পর তিন বার দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি টানা নিম্নচাপের কবলে পড়ে। হুগলি, পূর্ব বর্ধমান এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ভাল মানের আলুর উৎপাদন হয়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে গত মরসুমে আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় রাজ্যের হিমঘরগুলি প্রাথমিক ভাবে ভরেনি। ফলে, উত্তরপ্রদেশ থেকে আলু আনতে বাধ্য হন এ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা। হিমঘরে রাখা সেই আলুই এ বার বাজারে আসছে। সেই আলুর চেহারার সঙ্গে এ রাজ্যের চন্দ্রমুখী প্রজাতির আলুর মিল আছে। আর সেই সুযোগটাই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
আলু ব্যবসায়ীদের একাংশ জানিয়েছেন, মানুষ যাতে চিনতে না পারেন সে জন্য এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আলুতে এ বার বেশি করে এলামাটি (মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা মূলতানি মাটি) মেশাচ্ছেন। ফলে, ক্রেতারা চন্দ্রমুখী আলু চিনতে ভুল করছেন। ভাল আলুর সঙ্গে মিশে থাকছে উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা খারাপ আলুও। ব্যবসায়ী সমিতিগুলির দাবি, এ বার এ ভাবেই চলবে আলুর বাজার। এর কোনও প্রতিকার অন্তত চলতি মরসুমে ক্রেতাদের মিলবে না।
রাজ্যের আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হিমঘর থেকে বের করা আলুর সঙ্গে অনেক সময়ই অন্য রাজ্য থেকে নিয়ে আসা আলু মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চেহারায় মিল থাকলেও যে আলু আদপেই চন্দ্রমুখী নয়। ক্রেতারা চিনতে না পেরে সেই আলুই চন্দ্রমুখী বলে কিনছেন। তার ফলেই সমস্যা হচ্ছে।’’
শনিবার উত্তরপাড়া কাঁঠালবাগান বাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘‘বেশি দাম দিয়ে আলু কিনতে হচ্ছে। এরপরেও যদি ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সঙ্গে অসততা করেন, তা হলে কিছু বলার নেই।’’ বিক্রেতাদের পাল্টা যুক্তি, বাজারে যে সব ব্যবসায়ী আলু বিক্রি করেন, তাঁরা আলুর আড়তে পাইকারি ব্যবসায়ীদের থেকে তা কিনে আনেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের কিছুই করার থাকে না। এক শ্রেণির ফড়ের কারণেই ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন।
প্রশাসনের একটি সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, প্রায়ই আলুর আড়তগুলিতে অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে সিঙ্গুরের রতনপুরে একটি আড়তে গিয়ে সকলকে এলামাটি না মেশানো এবং আলুর মান বজায় রাখার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy