E-Paper

শালিমারে ফের দুষ্কৃতী-রাজ বেআব্রু, মার টোটোচালককে,মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে প্রাণভিক্ষা

শালিমার স্টেশন চত্বরে ব্যবসা করা দোকানদার, হোটেল মালিক, গাড়িচালকদের মারধর করে তোলা আদায়ের অভিযোগ অতীতে বার বার উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ ০৮:২৫
হাওড়া শালিমার স্টেশন চত্বরে ফের উঠেছে তোলাবাজির অভিযোগ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

হাওড়া শালিমার স্টেশন চত্বরে ফের উঠেছে তোলাবাজির অভিযোগ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ফের জুলুমবাজির অভিযোগ। ফের আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে মারধর, খুনের হুমকি। ঘটনাস্থল সেই দক্ষিণ-পূর্ব রেলের শালিমার স্টেশন। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ সত্ত্বেও শালিমার স্টেশন চত্বরে দুষ্কৃতী-রাজ যে আদৌ বন্ধ হয়নি, কিছু দিন আগের একটি ঘটনায় তা আবারও প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এ বার জুলুমবাজি টোটোচালকদের থেকে ‘রঙ্গিলা ট্যাক্স’ আদায়কে কেন্দ্র করে। দাবি মতো টাকা না দিতে চেয়ে পুলিশকে সব জানানোয় এক টোটোচালককে রাস্তায় ফেলে মারধর করে খুনের হুমকি দিল স্টেশন চত্বরে দাপিয়ে বেড়ানো এক দল দুষ্কৃতী। ঘটনার পর থেকে ভয় আর আতঙ্কে বাড়িছাড়া ওই চালক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে হাওড়ার নগরপাল— সর্ব স্তরে চিঠি লিখে প্রাণ বাঁচানোর আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

শালিমার স্টেশন চত্বরে ব্যবসা করা দোকানদার, হোটেল মালিক, গাড়িচালকদের মারধর করে তোলা আদায়ের অভিযোগ অতীতে বার বার উঠেছে। এ সব ঘিরে বোমাবাজি, গুলি, ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর কানে যাওয়ার পরে তিনি পুলিশকে বলেছিলেন কঠোর হাতে মোকাবিলা করতে। তার পরে কিছু দিন পরিস্থিতি আপাত শান্ত থাকলেও দুষ্কৃতীরা যে পিছু হটেনি, গত শুক্রবার বাইক-বাহিনী এক দল দুষ্কৃতীর হাতে সন্দীপকুমার দাস নামে এক টোটোচালকের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা তা আবারও দেখিয়ে দিয়েছে।

ঠিক কী ঘটেছিল? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ ১০০ ডায়ালে ফোন করে সন্দীপ জানান, তাঁকে এলাকার একটি সিনেমা হলের কাছে মারধর করা হচ্ছে। বটানিক্যাল গার্ডেন থানার পুলিশ দ্রুত পৌঁছে সন্দীপকে উদ্ধার করে স্থানীয় লক্ষ্মীনারায়ণতলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই যুবকের বুকে, মাথায় ও পায়ে গুরুতর চোট ছিল। এ দিকে, পুলিশ দেখে বাইকে চেপে আসা ২৫-৩০ জন যুবক ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয়।

আক্রান্ত সন্দীপ পুলিশকে অভিযোগে জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাসে শালিমার স্টেশনের পার্কিং লটের সামনে চার-পাঁচ জন তাঁকে হুমকি দিয়েছিল, স্টেশনের পার্কিংয়ে ঢুকলে প্রতি বার ৩০ টাকা করে দিতে হবে। না হলে ঢোকা যাবে না। ওই যুবক বলেন, ‘‘আমি ওই টাকা দিতে প্রথমে অস্বীকার করিনি। শুধু বলেছিলাম, রসিদ দিতে। কিন্তু ওরা বলে, এটা রঙ্গিলা ট্যাক্স। এর রসিদ হয় না। তখন আমি প্রতিবাদ করি। থানায় গিয়েও অভিযোগ জানাই। এটাই আমার অপরাধ।’’

সন্দীপ জানান, এর পরে গত পাঁচ মাস কিছু ঘটেনি। তিনি ঝামেলা এড়াতে প্রতি ট্রিপে ৩০ টাকা করে ‘রঙ্গিলা ট্যাক্স’ দিয়ে গিয়েছেন। আচমকাই গত ৩০ মে শুক্রবার রাতে বাইকে চেপে আসা ৩০ জনের একটি দুষ্কৃতী-দল ওই যুবককে তাড়া করে ধরে ফেলে এলাকার একটি সিনেমা হলের কাছে। সন্দীপকে রাস্তায় ফেলে বুকে, পিঠে, মাথায় এলোপাথাড়ি মারতে থাকে তারা। ঘটনাটি দেখে ছুটে আসেন স্থানীয় লোকজন। তখন দুষ্কৃতীরা পালায়। এর পরেই সন্দীপ ১০০ ডায়ালে ফোন করে সব জানান।

ওই যুবক বলেন, ‘‘পুলিশে ফোন করার পর থেকে ওরা আমাকে নানা ভাবে শাসাচ্ছে। খুনের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছি না। সারা ক্ষণ পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী থেকে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার, পুরো ঘটনা জানিয়ে সবাইকে চিঠি দিয়েছি।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। আসলে আমাদের এলাকায় এ সব হচ্ছে না। স্টেশন চত্বরে হচ্ছে। বিষয়টা রেল দেখছে।’’

এ বিষয়ে শালিমার আরপিএফের ভারপ্রাপ্ত অফিসার এস কে সিংহ বলেন, ‘‘এই জুলুমবাজি আমি বন্ধ করে ছিলাম। আবার যখন শুরু হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেল এ সব বরদাস্ত করবে না। কারণ, তারাই এখন স্টেশন চত্বরে পার্কিং দেখাশোনা করে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shalimar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy