E-Paper

গ্রামীণ হাওড়ায় বহুতলে কড়া হচ্ছে নিয়ম, চলবে নজরদারিও

৯ মিটারের উপরে উচ্চতা সম্পন্ন ভবন নির্মাণ করতে হলে জেলা পরিষদের ইঞ্জিয়ানিয়ারের পাশাপাশি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তা ‘ভেটিং’ করিয়ে আনতে হবে।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩৭
মাথা তুলেছে বহুতল। বাগনানে।

মাথা তুলেছে বহুতল। বাগনানে। নিজস্ব চিত্র

গার্ডেনরিচ কাণ্ডের পরে নড়েচড়ে বসল হাওড়া জেলা পরিষদ। জেলার গ্রামীণ এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে বেনিয়ম রুখতে কড়া নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিল তারা। একই সঙ্গে বহুতলের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে আরও কড়াকড়ি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জেলা পরিষদ সূত্রের খবর।

রবিবার রাতে গার্ডেনরিচে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন কয়েক জন। অভিযোগ, বহুতলটি বেআইনি ভাবে তৈরি হচ্ছিল। এই নিয়ে মঙ্গলবার হাওড়া জেলা পরিষদের বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়। জেলা পরিষদের পূর্ত সংংক্রান্ত স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তাপস মাইতি বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে যে ভাবে বহুতল তৈরি হচ্ছে, সেগুলির অনুমতি দেওয়া এবং নজরদারি রাখার ব্যাপারে কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেগুলি কড়া প্রয়োগ করা হবে।’’

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৯ মিটারের উপরে উচ্চতা সম্পন্ন ভবন নির্মাণ করতে হলে জেলা পরিষদের ইঞ্জিয়ানিয়ারের পাশাপাশি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তা ‘ভেটিং’ করিয়ে আনতে হবে। অনেক সময় ১৪.৫ মিটার উচ্চতার অনুমোদন পেয়েও উচ্চতা বাড়িয়ে নেন ভবনের মালিক। পরে তিনি জেলা পরিষদের কাছে বাড়তি নির্মাণ কাজের জন্য অনুমোদন চান। জেলা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বার থেকে
এই বাড়তি অনুমোদন তারা নিজেরা আর দেবে না। সেই আবেদন পাঠিয়ে দেওয়া হবে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে। একই সঙ্গে চালানো
হবে নজরদারি।

পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে নজরদারি চালানোর ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা আছে। কারণ, আমাদের যথেষ্ট ইঞ্জিনিয়ার নেই। কিন্তু এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা ঠিক করেছি, জেলা জুড়ে যতগুলি বহুতল হয়েছে, সেগুলির নিয়ম মানা হয়েছে কি না, তা মাসে এক বার সরেজমিন পরিদর্শন করা হবে। যাঁরা বেনিয়ম করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘হাওড়ায় দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। বাড়ছে বহুতল। কিন্তু বেআইনি নির্মাণ বরদাস্ত করা হবে না।’’

আমতা, উদয়নারায়ণপুর থেকে শুরু করে বাগনান, শ্যামপুর, পাঁচলা, সাঁকরাইল প্রভৃতি এলাকায় একের পর এক বহুতল মাথা তুলছে। কোথাও আবাসন, কোথাও শপিং মল আবার কোথাও দোকান হচ্ছে। এই সব বহুতলের জন্য অনুমতি নিতে হয় জেলা পরিষদের কাছ থেকে। সে জন্য নকশা জেলা পরিষদকে জমা দিতে হয়। ১৪.৫ মিটার পর্যন্ত উচ্চতার ভবনের জন্য জেলা পরিষদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। অভিযোগ, অনুমতি নেওয়ার পরে বহু ভবনের মালিক ইচ্ছামতো নকশার বাইরে বেরিয়ে গিয়ে নির্মাণ কাজ করেন। যে ছাড় রাখার কথা হয়, তা রাখা হয় না। ফলে আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢোকার রাস্তা থাকে না। নিকাশি খাল বুজিয়ে দেওয়া হয়। এক কথায়, নৈরাজ্য চলে বলে অভিযোগ।

সাঁকরাইলের আলমপুরের বাসিন্দা তথা কংগ্রেস নেতা অলোক কোলে বলেন, ‘‘সাঁকরাইলের বহু এলাকা কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এগুলির উপরে জেলা পরিষদের কোনও নজরদারি নেই। দেরিতে হলেও জেলা পরিষদের ঘুম ভেঙেছে, এটা ভাল লক্ষণ।’’ বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি অরুণউদয় পাল চৌধুরীর ক্ষোভ, ‘‘এত দিন জেলা পরিষদ কী করছিল?’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষের সুরও একই।

তবে দেরিতে হলেও জেলা পরিষদের এমন উদ্যোগে খুশি জেলার বাসিন্দাদের অনেকে। বাগনানের একটি বহুতল আবাসনের বাসিন্দা সমরেন্দু সামন্ত বলেন, ‘‘আবাসনগুলির নির্মাণে বেনিয়ম রুখতে সরকারের নানা ব্যবস্থা আছে। সেগুলি জেলা পরিষদ যে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা ভাল কথা।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Building Collapse Garden Reach

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy