Advertisement
২৬ মে ২০২৪
বৈঠকের কথা জানেনই না, দাবি সভাপতির
TMC Party Meeting

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি বৈঠকে সভাপতির পাশে শ্বশুর!

সমিতির সভাপতি নির্মল নিজেই। তাঁর দাবি, বৈঠকের কথা তাঁকে জানানোই হয়নি। সমিতির সভাপতির চিঠি না পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

উলুবেড়িয়া-২ ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির চেম্বারে চলছে রোগী কল্যাণ সমিতির সভা।

উলুবেড়িয়া-২ ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির চেম্বারে চলছে রোগী কল্যাণ সমিতির সভা। নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:০১
Share: Save:

রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠক চলছে। সেখানে হাজির পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির স্বামী, শ্বশুর, সহ-সভাপতির স্বামী! শাসকদলের কয়েক জন জনপ্রতিনিধিও উপস্থিত। যদিও বৈঠকের চিঠি পাননি কেউ।

বুধবার উলুবেড়িয়া ২ ব্লকের বৃন্দাবনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে এঁদের উপস্থিতির কথা সামনে আসায় অস্বস্তিতে পড়েছে প্রশাসন। ক্ষুব্ধ সরকারি আধিকারিকদের একাংশও। উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক চিকিৎসক নির্মল মাজিও উষ্মা প্রকাশ করেছেন।

ওই সমিতির সভাপতি নির্মল নিজেই। তাঁর দাবি, বৈঠকের কথা তাঁকে জানানোই হয়নি। সমিতির সভাপতির চিঠি না পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, বিধায়কের প্রতিনিধি হিসাবে বৈঠকে ছিলেন শেখ ইলিয়াস। তিনি ওই তৃণমূল নেতা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি। বর্তমান সভাপতি মালেখা খাতুন তাঁর পুত্রবধূ। ইলিয়াসের দাবি, ‘‘বিধায়কের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম।’’ নির্মলের দাবি, বৈঠকের কথা তিনি জানতেন না। ফলে কাউকে প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠানোর প্রশ্ন নেই।

বৈঠক ডেকেছিলেন বিএমওএইচ পৌলমী প্রধান। তাঁর দাবি, ‘‘প্রতি বারের মতোই বিধায়কের চিঠি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে পাঠিয়েছিলাম। ইলিয়াস বলেছিলেন, তিনি বিধায়কের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাই বৈঠকে থাকতে দিয়েছিলাম।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বিধায়ক, বিডিও, যুগ্ম বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি, স্থানীয় থানার ওসি-সহ ৯ জনকে বৈঠকের চিঠি পাঠান বিএমওএইচ। বৈঠক হয় পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়ে, মালেখার ঘরে। মালেখার পাশের চেয়ারেই তাঁর শ্বশুর ইলিয়াস বসেছিলেন। বিএমওএইচ বসেন অন্যদের মাঝে। পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি চন্দনা মণ্ডলের স্বামী গৌর মণ্ডলও বৈঠকে ছিলেন। এ ছাড়াও ছিলেন সমিতির একাধিক কর্মাধ্যক্ষ, কিছু পঞ্চায়েতের প্রধান।

তাঁরা কেন ছিলেন?

বিএমওএইচ-এর উত্তর, ‘‘পোলিও-সহ কিছু কর্মসূচির সচেতনতা প্রচারের জন্য ওঁরা বৈঠকে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির নির্দেশেই।’’ গৌরের বক্তব্য, ‘‘আমি মিটিংয়ে যাইনি। স্ত্রীকে আনতে গিয়েছিলাম। তখনও মিটিং চলছিল। সকলে বসতে বলায়, গিয়ে বসি।’’

মালেখাকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফোন ধরে তাঁর স্বামী শেখ মাসুদ জানান, স্ত্রী ডাক্তারখানায় গিয়েছেন। কথা বলতে পারবেন না। রাজাপুর থানার ভিলেজ পুলিশ মাসুদ বলেন, ‘‘মিটিং চলছিল, আমি এমনি বসেছিলাম।’’

প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সরকারি মিটিংয়ে বাইরের কারও থাকার কথা নয়। এতে বৈঠকের কথা বাইরে বেরিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।’’ বিধায়কের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রোগীকল্যাণ সমিতির মিটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে কোনও বৈঠকই তাই। সেখানে অন্য কারও প্রবেশ মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ বিডিও অভিজ্ঞা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি সবে এই পদে যোগ দিয়েছি। ওই বৈঠকে ছিলাম না। তবে বিষয়টি শুনেছি। এই ভাবে সরকারি বৈঠক একেবারেই কাম্য নয়। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

বিরোধীদের অভিযোগ, মালেখা বা চন্দনার কাজ বকলমে ইলিয়াস-গৌরেরাই চালান। তাঁরা অবশ্য এ কথা মানেননি।

থাকার কথা যাঁদের

* বিধায়ক, উলুবেড়িয়া উত্তর

* উলুবেড়িয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি
* উলুবেড়িয়া বিডিও ২

* যুগ্ম বিডিও

* ওসি রাজাপুর থানা

* স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ উলুবেড়িয়া ২

* মেডিক্যাল অফিসার বৃন্দাবনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

* সিডিপিও উলুবেড়িয়া ২

* ব্লক পাবলিক হেলথ্‌ নার্স/ পাবলিক হেলথ্‌ নার্স

বৈঠক ডেকেছিলেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক পৌলমী প্রধান।

যাঁদের থাকা নিয়ে প্রশ্ন

* শেখ ইলিয়াস (তৃণমূল নেতা)

* গৌর মণ্ডল (তৃণমূল নেতা)

* শেখ মাসুদ (ভিলেজ পুলিশ)

* শেখ মহসিন (তুলসীবেড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান)

* আব্দুল হক মোল্লা
(খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ)

* প্রতিমা মণ্ডল (পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uluberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE