E-Paper

গুলি-কাণ্ডে পিস্তলের ফরেন্সিক পরীক্ষা, পুলিশি হেফাজতে স্বামী

ফ্ল্যাটের মালিক গোপাল যাদব তাঁর স্ত্রী পুনম যাদবকে রক্তাক্ত অবস্থায় লিফটে করে নামিয়ে আনছেন। সিসি ক্যামেরাতেও সেই ছবি ধরা পড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:১৮

—প্রতীকী চিত্র।

হাওড়ার শিবপুরের একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে গুলি-কাণ্ডে ধৃত গোপাল যাদব তাঁর স্ত্রীকে লক্ষ্য করে নিজে গুলি চালিয়েছিলেন, না কি ‘মজা’ করতে গিয়ে গুলি চলেছিল, তা জানতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। সে কারণে আপাতত ধৃতের দাবি মতো অনিচ্ছাকৃত ভাবে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার বক্তব্যে সিলমোহর দিচ্ছে না পুলিশ।

তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, সাধারণত অপরাধ করার পরে অপরাধীরা তাতে ব্যবহৃত অস্ত্র সরিয়ে ফেলে বা ফেলে দেয়। গোপালও তা-ই করেছিলেন। কারণ, আগ্নেয়াস্ত্রটি অন্য জায়গা থেকে ধৃতের কথা মতো উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে, সেটি কোথা থেকে উদ্ধার হয়েছে, তা জানাতে চাননি তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে ধৃত গোপালকে হাওড়া আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৯ (খুনের চেষ্টা), ২৫ (২৭) ধারায় (অস্ত্র আইন) মামলা রুজু হয়েছে।

বুধবার সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ ওই দম্পতির ছেলে-মেয়ে স্কুলে চলে যাওয়ার পরেই শিবপুরের ওই বহুতল আবাসনের ডি ব্লকের একটি ফ্ল্যাটে গুলি চলে। তার পরেই দেখা যায়, ওই ফ্ল্যাটের মালিক গোপাল যাদব তাঁর স্ত্রী পুনম যাদবকে রক্তাক্ত অবস্থায় লিফটে করে নামিয়ে আনছেন। সিসি ক্যামেরাতেও সেই ছবি ধরা পড়ে। পুনমকে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

এ দিকে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার ওই খবর আবাসন থেকে পাওয়ার পরেই পুলিশ হাসপাতাল থেকে আহত তরুণীর স্বামী গোপালকে গ্রেফতার করে। তাকে শিবপুর থানায় নিয়ে এসে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টানা জেরা করেন তদন্তকারীরা। এ দিন হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা জানান, বিহারের সিওয়ান জেলার বাসিন্দা গোপালের হাবভাব অনেকটা ‘বাহুবলীর’ মতো। ঠিক করে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। দেশীয় ৭এমএম পিস্তলটি তিনি কোথায় রেখেছেন, তা উদ্ধার করতেই কালঘাম ছুটেছে পুলিশের। শেষে অনেক চেষ্টার পরে অস্ত্রটি পুলিশ উদ্ধার করে বাজেয়াপ্ত করে।

ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘টানা জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে ধৃত ব্যক্তি জানিয়েছেন, ওই দিন তিনি খাটে বসে অস্ত্রটি পরিষ্কার করছিলেন। ঠিক মতো ব্যবহার না জানায় গুলি ভর্তি পিস্তল থেকে তিনি ম্যাগাজ়িন খুলে নিলেও কোনও ভাবে একটি গুলি থেকে গিয়েছিল। সেই অস্ত্রটি কী ভাবে ব্যবহার করে, সামনের চেয়ারে বসে থাকা স্ত্রীকে দেখাতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’

তদন্তকারীরা জানান, ওই অস্ত্রটি দীর্ঘদিন ধরে ফ্ল্যাটে রেখেছিলেন ধৃত গোপাল। তার পরেও কেন ওই দিন স্ত্রীর সামনে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মজা করছিলেন, তা পরিষ্কার হয়নি। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই ব্যক্তি আসল ঘটনা আড়াল করতে চাইছেন। পুলিশ জানায়, হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলি ওই তরুণীর ঘাড় ছুঁয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় তিনি বিপন্মুক্ত। উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্রটি ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, ওই দেশীয় ৭এমএম পিস্তল কোথা থেকে গোপাল জোগাড় করেছিলেন এবং কেন তিনি সেটি রেখেছিলেন, তা দেখা হচ্ছে।

এই ঘটনার পরে শিবপুরে যে সব আবাসন আছে, সেখানে প্রতিটি গেটের মুখে মেটাল ডিটেক্টর রাখার বিষয়ে পুলিশ আবাসনগুলির অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police custody Shibpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy