Advertisement
E-Paper

‘ওর জন্যই মেয়ে অকালে চলে গিয়েছে, ভুলপথে ছেলে’! বলছেন ডোমজুড়ের পর্নকাণ্ডে পলাতক শ্বেতার প্রাক্তন স্বামী

হাওড়ার বাঁকড়ার বাসিন্দা শ্বেতা খানের কাণ্ডকারখানা প্রকাশ্যে এসেছে সোদপুরের এক তরুণীর সৌজন্যে। অভিযোগ, প্রায় পাঁচ মাস তাঁকে একটি বাড়িতে আটকে রেখে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন করেছেন শ্বেতা এবং তাঁর ছেলে আরিয়ান।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫ ১৯:৩০
Sodepur Woman Assault Case

পর্নকাণ্ড এবং সোদপুরের তরুণীকে নির্যাতনে অভিযুক্ত শ্বেতা খান ওরফে ফুলটুসি। ছবি: সংগৃহীত।

অভিযোগের পর দিন দুয়েক কেটে গিয়েছে। এখনও পুলিশ খুঁজে পায়নি সোদপুরের তরুণীকে নিগ্রহে অভিযুক্ত শ্বেতা খান এবং তাঁর পুত্র আরিয়ান খানকে। মা-ছেলের বিরুদ্ধে পর্ন ভিডিয়ো বানানো থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে তরুণীদের দেহব্যবসায় নামানোর অভিযোগ উঠেছে। সেই শ্বেতা ওরফে ফুলটুসি ওরফে মহসিনা খাতুনের প্রাক্তন স্বামীর দাবি, তাঁদের সংসার তছনছ হয়ে গিয়েছে। মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ছেলে ভুলপথে! এ সবের জন্য দায়ী তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী। হুগলির ফুরফুরায় থাকেন মোহাম্মদ সৈয়দ মোরসেলিম। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, শুধু সম্পত্তির লোভে তাঁকে বিয়ে করেছিলেন শ্বেতা। কিন্তু স্ত্রীর স্বেচ্ছাচারিতা এবং অত্যাচারের জন্য বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন। অন্য দিকে, পর্নকাণ্ড এবং তরুণীকে নির্যাতনে অভিযুক্তা শ্বেতার সঙ্গে শাসকদলের যোগ নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে হাওড়ায়। এ নিয়ে মন্ত্রী অরূপ রায়ের প্রতিক্রিয়া, যদি তৃণমূলের কোনও পদে থেকে থাকেন ওই মহিলা, সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

সোদপুর-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শ্বেতার প্রাক্তন স্বামী পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। হাওড়ার মঙ্গলাহাট এবং কলকাতার মেটিয়াবুরুজে কাপড়ের ব্যবসা ছিল মোরসেলিমের। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘টাকা এবং সম্পত্তির লোভে আমায় বিয়ে করেছিল ওই মহিলা। তার পর থেকে শুধুই অশান্তি। ও আমার গায়ে হাত তুলত। আমার পরিবারের লোকজনকেও মারধর করত। বাড়িতেই অন্য পুরুষবন্ধুদের ডেকে নিয়ে গিয়ে ফুর্তি করত।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, হাসপাতালে যখন তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে ভর্তি করানো হয়েছিল, তখন বাড়ির দলিল নিয়ে গিয়ে নিজের নামে সম্পত্তি লিখিয়ে নেন শ্বেতা। প্রাক্তন স্বামীর কথায়, ‘‘গোটা পরিবারটাকে শেষ করে দিয়েছে ও।’’ অন্য দিকে, শ্বেতার দ্বিতীয় স্বামীর খোঁজ মেলেনি।

২০০২ সালে শ্বেতা ও মোরসেলিমের বিয়ে হয়। দম্পতির দুই সন্তান আরিয়ান খান এবং ইশিকা খান। কিছু দিন আগে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। মেয়ের ‘আত্মহত্যা’র জন্য স্ত্রীকেই দায়ী করেছেন প্রাক্তন স্বামী। তিনি বলেন, ‘‘সন্তানদের জন্মের পর থেকেই টাকা এবং সম্পত্তির লোভ আরও প্রকট হয় ওর। খারাপ ব্যবহার করত বাড়ির সকলের সঙ্গে। প্রতিবাদ করলে বাড়ির লোকেদের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলত। বাড়ির যত মূল্যবান আসবাবপত্র সেগুলো বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চলে গিয়েছিল।’’ প্রৌঢ়ের দাবি, স্ত্রীর অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরে বিয়ের ছ’বছর পরেই হাওড়ার বাঁকড়ার বাড়ি ছেড়ে তিনি ফুরফুরা শরিফে চলে যান। এখনও সেখানেই থাকেন। বলেন, ‘‘স্ত্রীর সঙ্গে ধর্মীয় মতে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। মেয়ের মৃত্যুর জন্য ও দায়ী। ছেলে আরিয়ানকে বিপথে চালিত করেছে ও। নানা নোংরা কাজে জড়িয়ে রয়েছে ও।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, ফকির পাড়ায় প্রাক্তন স্বামীর বিশাল সম্পত্তি রয়েছে। সেগুলো ভোগ করছেন শ্বেতা। ওইখানে একটি বড় বাড়ি আছে। তাতে ভাড়া বসিয়েছেন শ্বেতা। ভাড়ার টাকা নেন ওই মহিলাই। অন্য দিকে, পুলিশ সূত্রে খবর, হাওড়ার বাঁকড়ার যে বাড়িতে মা-ছেলে থাকতেন, তাতে একটি মাত্র সিসি ক্যামেরা লাগানো। তার হার্ড ড্রাইভ উদ্ধারের চেষ্টায় পুলিশ। তাতেই স্পষ্ট হতে পারে, ওই বাড়িতে কার কার যাতায়াত ছিল। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুধু প্রতিপত্তিই নয়, যথেষ্ট প্রভাবও ছিল শ্বেতার। নেপথ্যে ছিল রাজনৈতিক হাত। তাঁদের দাবি, তৃণমূলের মিটিং-মিছিলে প্রায়শই উপস্থিত থাকতেন ওই মহিলা। সোদপুর-কাণ্ডের অভিযুক্ত নাকি শাসকদলের সংখ্যালঘু সেলেও ছিলেন। শ্বেতার নামে যে সমাজমাধ্যম প্রোফাইল রয়েছে, সেটিতে তৃণমূলের নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর একাধিক ছবি দেখা যাচ্ছে। যা নিয়ে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। তবে মন্ত্রী অরূপ রায়ের দাবি, শ্বেতাকে তিনি চেনেন না। তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, জানেন না। তিনি বলেন, ‘‘এ সব মেয়েরা প্রভাব খাটানোর জন্য এই সব করতে পারে। দুর্জনের তো ছলের অভাব হয় না! আর যদি উনি দলে থাকেন, তা হলে দল থেকে তাড়াব।’’ বাঁকড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আখতার হোসেন মোল্লার দাবি, ‘‘শ্বেতা খান আগে সিপিএম করত। সুন্দরী মহিলা। নিজের রূপ দেখিয়ে যে কোনও কাজ হাসিল করে নিত। তৃণমূলেও ঢোকার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ওই মহিলা শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে মারধর করে সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে। সবাই চাইছে, ওর কঠিন শাস্তি হোক।’’

উল্লেখ্য, শ্বেতার কাণ্ডকারখানা প্রকাশ্যে এসেছে সোদপুরের এক তরুণীর সৌজন্যে। অভিযোগ, প্রায় পাঁচ মাস তাঁকে একটি বাড়িতে আটকে রেখে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন করেছেন শ্বেতা এবং তাঁর ছেলে আরিয়ান। গত শুক্রবার ওই তরুণী কোনও রকমে পালিয়ে বাড়ি যান। তার পরে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে তরুণীদের ডেকে তাঁদের দিয়ে পর্ন ভিডিয়োর ব্যবসা চালাতেন মা-ছেলে। খুলেছিলেন প্রোডাকশন হাউস। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সোদপুরের যে তরুণীকে আটকে রাখা হয়েছিল, তাঁকে একবার কুলু-মানালিও নিয়ে গিয়েছিলেন শ্বেতা এবং আরিয়ান। কী কারণে তরুণীকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Howrah Police Crime Sweta Khan Sodepur Woman assaulted TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy