জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার স্নানযাত্রা। পনেরো দিন পরে রথযাত্রা। হুগলির গুপ্তিপাড়ায় উৎসব হয় রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে। সে কারণে ব্যবসায়ীদের আর্জি মেনে গুপ্তিপাড়া স্টেশন সংলগ্ন জায়গায় গুমটি ও দোকান উচ্ছেদ এক মাস স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন রেল কর্তৃপক্ষ।
পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত মঙ্গলবার বলেন, ‘‘রথযাত্রার জন্য এক মাস ওখানে উচ্ছেদ স্থগিত থাকবে। রথযাত্রার পরে উচ্ছেদ হবে।’’ রেলের দাবি, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে লক্ষ্য রেখেই সর্বত্র অবৈধ দখলদারি হটানোর প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে আইনি পদ্ধতি মেনে।
হুগলি জেলার বিভিন্ন জায়গাতেই জবরদখলকারী উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে রেল। হকারদের পাশাপাশি রেলের জমি থেকে বসতি উচ্ছেদেরও নোটিস দেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে এবং পুনর্বাসনের দাবি আন্দোলনও হচ্ছে নানা জায়গায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি পূর্ব রেলের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গুপ্তিপাড়া স্টেশন লাগোয়া এলাকায় রেলের জমি থেকে ৮৬টি গুমটি এবং দোকান সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। উঠে যাওয়ার সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল গত সোমবার পর্যন্ত। নোটিসে বলা হয়েছিল, না সরালে আগামী কাল, বৃহস্পতিবার ওই সব দোকান ও গুমটি ভেঙে দেওয়া হবে।
২৭ জুন রথযাত্রা। ৫ জুলাই উল্টোরথ। গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা বিখ্যাত। মেলা বসে। অসংখ্য মানুষের সমাগম হয়। স্নানযাত্রা বা মূল উৎসবের দিনগুলিতে প্রচুর ভিড় হয়। উল্টোরথের আগের দিন ভান্ডার লুট দেখতেও বহু মানুষ আসেন। এই পরিস্থিতিতে রুজি-রোজগারের দিকে লক্ষ্য রেখে রথযাত্রা পর্যন্ত উচ্ছেদ স্থগিত রাখতে রেল কর্তৃপক্ষকে গণস্বাক্ষর করা দরখাস্ত জমা দেন ওই ব্যবসায়ীরা।
গুপ্তিপাড়া ১ পঞ্চায়েতের সদস্য তথা প্রাক্তন উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ বলেন, ‘‘গতকাল (সোমবার) আমরা ওই ব্যবসায়ীদের নিয়ে নবদ্বীপে রেলের সহকারী বাস্তুকার রাজেশ কুমারের কাছে গিয়েছিলাম। আমাদের কথা শুনে রেলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রথের সময়ে উচ্ছেদ স্থগিত রাখতে সম্মত হয়েছেন। ১২ জুলাইয়ের পরে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।’’
উচ্ছেদের আওতায় থাকা ব্যবসায়ীদের মধ্যে জগন্নাথ কুন্ডু, বাসুদের দাসেরা জানান, স্টেশন লাগোয়া ওই জায়গা থেকে তাঁরা সরে যাবেন। তবে তাঁদের আর্জি, তার পরিবর্তে রাস্তার ধারে রেলের পড়ে থাকা জমিতে কমপ্লেক্স গড়ে দোকানঘর তৈরি করে তাঁদের ভাড়া দিন রেল কর্তৃপক্ষ। তাতে তাঁদের সংসার চলবে, রেলেরও আয় হবে।
তবে এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও নিশ্চয়তা মেলেনি। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্তের বক্তব্য, এটি রেলের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। যদি কখনও এই মর্মে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়, তখন দেখা হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)