Advertisement
০১ মে ২০২৪
Holi

দোলের মঠ এসেছে পর্তুগিজদের হাত ধরে

বছর পঁচিশ আগে পর্যন্তও এই দুই খাবার ছাড়া দোল উৎসব ভাবাই যেত না। উৎসবে কেউ কারও বাড়ি গেলে অন্য মিষ্টির সঙ্গে এই দুটি মিষ্টিও তুলে দেওয়া হত। এখন সেই চল প্রায় নেই। কিন্তু মঠ এল কোথা থেকে?

An image of holi

দোল উপলক্ষে মঠ বিক্রি হচ্ছে। পান্ডুয়ার হাটতলা বাজারে। ছবি: সুশান্ত সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৬:৩৬
Share: Save:

তরুণ প্রজন্মের কাছে সম্ভবত কদর নেই। কিন্তু দোলের সময় এলেই মঠ আর ফুটকড়াইয়ের কথা মনে পড়ে বহু মধ্যবয়সি থেকে প্রবীণদের। এখনও বহু দোকানে বিক্রি হয়।

বছর পঁচিশ আগে পর্যন্তও এই দুই খাবার ছাড়া দোল উৎসব ভাবাই যেত না। উৎসবে কেউ কারও বাড়ি গেলে অন্য মিষ্টির সঙ্গে এই দুটি মিষ্টিও তুলে দেওয়া হত। এখন সেই চল প্রায় নেই। কিন্তু মঠ এল কোথা থেকে?

প্রায় ১০০ বছর আগে দীনেন্দ্রকুমার রায় তাঁদের গ্রামের দোলতলার মেলার বর্ণনা করতে গিয়ে বিভিন্ন দোকানে খাবারের যে তালিকা দিয়েছিলেন, তাতে ‘চিঁড়া, মুড়কী, ছানা বর্জিত মোণ্ডা, গোল্লা, রসকরা, তেলেভাজা, জিলিপি, মেঠাই, বাতাসা আর চিনির ও গুড়ের ছাঁচ’-এর কথা ছিল। মঠ-ফুটকড়াই ছিল না। কিন্তু খোঁজখবর করতে গিয়ে দেখি, এই চিনির ছাঁচই হচ্ছে মঠ। অর্থাৎ, মিষ্টিটি থাকলেও তার নামকরণ নবীন।

মঠ কিন্তু বাংলার খাবার নয়, পর্তুগিজদের। প্রথম দেখা যায় ব্যান্ডেল চার্চে। ক্রিসমাসের সময় গির্জাকৃতি ছাঁচে ঢালা চিনির রসের এই মিঠাইটি ছিল ওদের প্রিয়। ওই সময় গির্জায় আসা সকলেরই হাতে তুলে দেওয়া হত প্রভু জিশুর এই প্রসাদ। বাংলার ময়রারা সানন্দে এটিকে তুলে নিল নিজের করে। আসলে বাতাসার পাকের সঙ্গে এর খুব মিল। একই রকম চিনির রসের পাক। বাতাসা তৈরি করতে হয় ফুটো পাত্র থেকে মাদুরের উপর ফোঁটা ফোঁটা চিনির রস ফেলে। আর মঠ তৈরি করতে হয়, কাঠের ছাঁচে রস জমিয়ে। কখনও রং মিশিয়ে। তবে রসটা একটু বেশি গাঢ়।

পর্তুগিজরা ওই মিষ্টির কী নাম দিয়েছিল, জানা নেই। আমাদের ময়রারা প্রথমে বলত, চিনির ছাঁচ। গির্জার আকার দেখে লোক মুখে নাম হয়ে যায় মঠ। ভাবা যায়, সুদূর পর্তুগালের মিষ্টি আপন করল এই বাংলা।

কিন্তু মঠের সঙ্গে ফুটকড়াই এল কোথা থেকে?

আসলে এই ফাগুন মাসটি যেমন রবিশস্যের মাস, তেমনই ছোলারও মাস। একসময়ে পাকা ছোলার গাছে গ্রামবাংলার খেত ছেয়ে থাকত। রাখাল বালকেরা আলের ধারে খড়ের আগুন জ্বেলে তাতে পাকা ছোলার গাছ ফেলে আধপোড়া করে ‘হোরা' করত। ‘হোরা’ হচ্ছে আধপোড়া ছোলা। ওদের কাছে এটা ছিল খুবই মুখরোচক খাবার। বাংলার ময়রারা ছোলার বদলে কখনও কলাই বা মটরকে ভেজে ‘ফুটকলাই’ তৈরি করতেন। পরে শুধু না ভেজে, ভাজার পর ঘন রসে ফেলা শুরু হয়। নাম হয় ‘ফুটকড়াই’।

যে কোনও খাবার জিনিস— সে নির্দিষ্ট সময়ের ফল মিষ্টি যা-ই হোক, দেবতাকে উৎসর্গ না করে বাঙালি খায় না। ফলে, মঠ-ফুটকড়াইও দোলের রাধাগোবিন্দের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে। আর ক’দিন বাদেই শক্ত দাঁতে বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের স্বাদ নেওয়ার পালা।

তথ্য: দেবাশিস মুখোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Holi Portuguese
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE