E-Paper

তিন সপ্তাহ জলে ডুবে পাঁচটি ওয়ার্ড, দুর্বিষহ পরিস্থিতি হাওড়ায়

হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারের বর্ষায় সব থেকে বেশি জল জমেছে সালকিয়া, বেলগাছিয়া ভাগাড় ও বালিটিকুরির মতো একাধিক এলাকায়।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০৫
হাওড়ার কোনায় বাড়ির মধ্যে জমা জলে দুর্ভোগ চলছে এখনও।

হাওড়ার কোনায় বাড়ির মধ্যে জমা জলে দুর্ভোগ চলছে এখনও। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

টানা তিন সপ্তাহ ধরে জলবন্দি হাওড়া পুরসভার পাঁচটি ওয়ার্ডের কয়েক লক্ষ বাসিন্দা। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ঘরের ভিতরেও জমে থাকা হাঁটুজল থেকে সংসারের জিনিসপত্র বাঁচাতে সেগুলি বিছানায় তুলে দিতে হয়েছে। ইটের উপরে ইট পেতে তার উপরে বসাতে হয়েছে ফ্রিজ, গ্যাস ওভেন। শৌচাগার জলে ডুবে থাকায় ছুটতে হচ্ছে প্রতিবেশীর দোতলা বাড়িতে। জমা জলের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাজার, দোকান। মুড়ি খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে জলবন্দি বাসিন্দাদের। ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত দু’দশকের মধ্যে এতটা খারাপ পরিস্থিতি আগে হয়নি।

হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারের বর্ষায় সব থেকে বেশি জল জমেছে সালকিয়া, বেলগাছিয়া ভাগাড় ও বালিটিকুরির মতো একাধিক এলাকায়। প্রতিটি ওয়ার্ডই হাওড়া শহরের উত্তর-পশ্চিম দিকে। সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি ৭, ৮, ৯, ১০ এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে। হাওড়া-আমতা রোড থেকে মুক্তারামবাবু স্কুলের মোড় হয়ে ডান দিকে মাইলখানেক গেলেই বালিটিকুরির খালধার পাড়া। সেখানে হাঁটুজল পেরিয়ে গলির ভিতরে ঢুকতে গিয়ে মনে হবে, যেন বন্যা হয়েছে ওই এলাকায়। রাস্তাঘাট, অলিগলি, এমনকি প্রতিটি বাড়িই ডুবে রয়েছে দুই থেকে তিন ফুট জলের নীচে। সেই জলে দাঁড়িয়েই এলাকার দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা মধুসূদন অধিকারী বললেন, ‘‘গত ২০ বছর ধরে প্রতি বর্ষায় জমা জলের সমস্যায় ভুগছি। কিন্তু এ বারের মতো পরিস্থিতি আগে কখনও হয়নি। ঘরের ভিতরে হাঁটুজল। ১৫ দিন ধরে সেই জল এক ভাবে দাঁড়িয়ে। এখানে বাড়ি না করে বোধহয় ফুটপাতে থাকলে ভাল হত।’’

আর এক বাসিন্দা অনিতা মণ্ডলের কথায়, ‘‘দিনের পর দিন এই নোংরা জল ঘেঁটে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। প্রতিটি বাড়িতেই জল ঢুকে আছে। সাপখোপ ঘুরে বেড়াচ্ছে। খাবারদাবারও কিনতে যেতে পারছি না। মুড়ি খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। প্রশাসনের কেউ কোনও খোঁজ নিতে আসেননি।’’ শুধু বালিটিকুরি খালধার পাড়া নয়, বেলগাছিয়া ভাগাড় সংলগ্ন সি রোড, বি রোড, বামনগাছি, ঘোষপাড়া ও সালকিয়াতেও বৃষ্টি থামার পরেও জল নামছে না বলে অভিযোগ।

কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হল কেন?

৫০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি ত্রিলোকেশ মণ্ডল বললেন, ‘‘হাওড়া শহরের মূল নিকাশি নালা হল পচা খাল। ওই খাল পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব সেচ দফতরের। বর্ষার আগে খাল সংস্কারের কাজ না করায় এখন জল বেরোতে পারছে না। তাই এমন ভরাডুবি অবস্থা।’’ সেচ দফতর সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, পচা খাল সাফাইয়ের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। হাওড়া পুরসভার কর্তাদের বক্তব্য, হাওড়া শহরের উন্নয়নের কাজে শুধু পুরসভা নয়, পূর্ত দফতর, কেএমডিএ, কেএমডব্লিউএসএ, সেচ দফতর-সহ একাধিক দফতর যুক্ত। দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই হাওড়ার এই হাল। তবে, পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দেখে শনিবার থেকেই বেলগাছিয়া ভাগাড়ের অক্সিডেশন পন্ড থেকে যে খালটি পচা খাল পর্যন্ত গিয়েছে, সেটি থেকে কচুরিপানা ও আবর্জনা সরানোর করা হচ্ছে।

পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘দফতরগুলির মধ্যে আরও সমন্বয় রক্ষা করা প্রয়োজন। তবে দেরিতে হলেও কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, ওই পাঁচটি ওয়ার্ড থেকে জল দ্রুত নেমে যাবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy