E-Paper

কাজ কমছে জুটমিলে, ভিন্‌ রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন বহু শ্রমিক

হুগলির ১১টি জুটমিলে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। প্রতিদিন স্থায়ী শ্রমিকের অনুপস্থিতির নিরিখে বদলি শ্রমিকদের কাজে লাগান মিল কর্তৃপক্ষ।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৮
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

পুজোর মুখে হুগলির ১১টি জুটমিলেই উৎপাদন অনেক কমে গিয়েছে। তার জেরে কাজে টান পড়ছে স্থায়ী শ্রমিকদেরই। অস্থায়ী এবং বদলি শ্রমিকদের (মিলের পরিভাষায় জিরো, ভাগওয়ালা) কাজ পাওয়ার পরিস্থিতি নেই। বদলি শ্রমিকেরা রাজ্য ছেড়ে গুজরাত, তেলেঙ্গনা, মহারাষ্ট্রে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে শ্রমিক মহল্লা সূত্রে খবর।

একটি সূত্রের খবর, বিভিন্ন জুটমিলে উৎপাদন ৬০ শতাংশের নীচে নেমে গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুটমিলের কর্তা মানছেন, ‘‘চাহিদা কম থাকায় উৎপাদন নির্দিষ্ট মাত্রায় ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’’ জেলা সিআইটিইউ সম্পাদক তীর্থঙ্কর রায়ের অভিযোগ, রাজ্যের শ্রমিক বিরোধী নীতির কারণেই চটকলগুলির এই হাল। তিনি বলেন, ‘‘পুজোর মুখে মিলগুলির হাল ফেরাতে অবিলম্বে রাজ্যের পদক্ষেপ দাবি করছি।’’ পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করে আইএনটিটিইউসি-র হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের ৪৮টি জুটমিলের শ্রমিকদের কাজ সুনিশ্চিত করতে সরকারি স্তরে দাবি জানিয়ে আসছি। চাল, চিনি, গমের মতো খাদ্যসামগ্রী আদানপ্রদানে চটের বস্তার বরাত বাড়ানো জরুরি। আমরা বিষয়টি জানিয়েছি কেন্দ্রীয় স্তরে। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার।’’

হুগলির প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ''জুটমিল কর্তৃপক্ষের উচিত শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বরাতের উপরই নির্ভরশীল না থেকে উৎপাদনে বৈচিত্র এনে বাজার ধরার চেষ্টা করা। এ ছাড়া, রাজ্যের জুটমিলগুলিতে শ্রমিকদের কাজ নিশ্চিত করতে শ্রম দফতরের উচিত নির্দিষ্ট বিধি আনা। যাতে শ্রমিকেরা ছ’দিনই কাজ পান মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তা নির্দিষ্ট করা।''

হুগলির ১১টি জুটমিলে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। প্রতিদিন স্থায়ী শ্রমিকের অনুপস্থিতির নিরিখে বদলি শ্রমিকদের কাজে লাগান মিল কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন মিল সূত্রের খবর, উৎপাদন কমে আসায় নিজেদের শ্রমিকদেরই কাজ দেওয়া যাচ্ছে না। সব বিভাগ রোজ চালুও রাখা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি সামলাতে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে ঘুরিয়ে শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তা নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছে শ্রমিকদের মধ্যে।

বরাতের অভাবে চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিলে দৈনিক উৎপাদন ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে। পরিস্থিতির জেরে এখানকার শ্রমিক মহল্লা ছেড়ে বেশ কিছু শ্রমিক ভিন্‌ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। কমবেশি একই অবস্থা রিষড়ার হেস্টিংস, দীর্ঘদিন বন্ধের পরে মাস কয়েক আগে খোলা ওয়েলিংটন জুটমিলেও। ভদ্রেশ্বরের ভিক্টোরিয়া বা বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস জুটমিলের পরিস্থিতিও এক।

রাজ্যের জুটমিলের পিএফ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, গোন্দলপাড়া জুটমিলের কর্মী রাজেশ জয়সোয়ারা বলেন, ‘‘রাজ্যে দু’টি মিল কর্তৃপক্ষ ভাল চালাচ্ছেন, যেগুলির ১০০ শতাংশ উৎপাদন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। কারণ, বিশ্বের ৭৮টি এমন দেশ আছে, যেখানে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রতিশ্রুতির পরেও ভারত সরকার সার্বিক ভাবে রাজ্যের জুটমিলগুলো যাতে চলে, সেই অনুযায়ী বরাত বাড়াচ্ছে না। উল্টে কমাচ্ছে। যার জেরে পুজোর মুখে মহল্লা ছাড়ছেন শ্রমিকেরা।’’

ভিক্টোরিয়া জুটমিলের ‘ব্যাচিং’ বিভাগের এক শ্রমিকের খেদ, ‘‘আমরা যে কাজ করে সংসার চালাতাম, সেই পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। ফলে, আমাদের শ্রমিক মহল্লার অনেকেই কাজের জন্য ভিন্‌ রাজ্যে চলে যাচ্ছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy