Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪
Flood Situation in West Bengal

প্লাবনে প্রলম্বিত ছুটি, বই ভেসে গিয়েছে অনেকের, সিলেবাস শেষ করা নিয়ে চিন্তা

সামনেই পুজোর ছুটি। নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের গোড়ায় বার্ষিক পরীক্ষা। অথচ, বন্যাদুর্গত হুগলির আরামবাগ মহকুমার খানাকুলের দু’টি ব্লকে স্কুল খোলার পরিস্থিতি নেই। অনেক স্কুল ডুবে। কোনও স্কুলে ত্রাণ শিবির।

জলমগ্ন এলাকা, ছোট ডিঙ্গি  একমাত্র যাতায়াতের ভরসা।  খানাকুলের বার নন্দনপুর এলাকায়।

জলমগ্ন এলাকা, ছোট ডিঙ্গি একমাত্র যাতায়াতের ভরসা। খানাকুলের বার নন্দনপুর এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।

পীযূষ নন্দী , নুরুল আবসার
আরামবাগ-আমতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৫০
Share: Save:

কাগনানে ত্রাণ নিতে এসেছিল খানাকুলের ধান্যগড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী প্রিয়াঙ্কা পোড়ে। বন্যায় ঘর ভেসেছে। সঙ্গে বইপত্রও। মাধ্যমিক ফেব্রুয়ারিতে। মঙ্গলবার প্রিয়াঙ্কা বলে, ‘‘পরীক্ষা নিয়ে এখন কিছু ভাবতেই পারছি না।’’ মা টুম্পার গলাতেও অনিশ্চয়তা, ‘‘মেয়ে আদৌও পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা, আমাদেরই বা কী ভবিষ্যৎ— কিছুই জানি না। স্কুল বইপত্র জোগাড়ের চেষ্টা করছে বলে শুনেছি।’’

সামনেই পুজোর ছুটি। নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের গোড়ায় বার্ষিক পরীক্ষা। অথচ, বন্যাদুর্গত হুগলির আরামবাগ মহকুমার খানাকুলের দু’টি ব্লকে স্কুল খোলার পরিস্থিতি নেই। অনেক স্কুল ডুবে। কোনও স্কুলে ত্রাণ শিবির। ফলে সিলেবাস শেষ করাই চ্যালেঞ্জ শিক্ষকদের কাছে। অনেক ছাত্রছাত্রীর বই ভেসেছে বন্যায়। তারা অথৈ জলে! উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। মহকুমার অন্য চার ব্লকে (আরামবাগ, পুরশুড়া, গোঘাট ১ ও ২) জল নেমেছে। সোমবার থেকে এখানে স্কুল খুলেছে। হাওড়ার প্লাবিত উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকেও বিদ্যালয় খুলতে শুরু করেছে। তবে এই সব জায়গাতেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় ক্ষতি যে কম হয়নি, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই মানছে। তাদের বক্তব্য, এ বার গরমে অতিরিক্ত ছুটি ছিল। গত মাসেই প্লাবনের কারণে আরামবাগ মহকুমায় তিন দিন স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। এ বার ফের দুর্যোগের ধাক্কায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয় প্রশাসন।

আপার প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা মিলিয়ে আরামবাগ মহকুমায় ২৩১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দ্বারকেশর ও রূপনারায়ণ নদ সংলগ্ন খানাকুল ২ ব্লকের ধান্যগড়ি পঞ্চায়েত সব থেকে বেশি বিধ্বস্ত। ধান্যগড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের টিচার ইন চার্জ শম্ভু গায়েন জানান, স্কুল চত্বরে জল কমলেও আশাপাশের সমস্ত গ্রাম এখনও প্লাবিত। পড়ুয়াদের আসা ঝুঁকির। পরিচালন কমিটি এবং অভিভাবকদের মতামত নিয়ে আগামী শুক্রবার থেকে পঠনপাঠন শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিলেবাস শেষ করা, শেষ করা না গেলে কী করা হবে, তা নিয়ে পরিচালন কমিটিতে আলোচনা করা হবে। পড়ুয়াদের অনেকের বই ভেসেছে। তাদের তালিকা তৈরি করে বইয়ের আবদেনপত্র জেলায় পাঠনো হবে। মঙ্গলবার এই ব্লকে কিছু খুদে পড়ুয়ার হাতে বইখাতা তুলে দেন জেলাশাসক মুক্তা আর্য।

খানাকুল ১ ব্লকের কৃষ্ণনগর জ্ঞানদা ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সমীরকুমার পাল জানান, আজ, বুধবার পঠনপাঠন শুরু হবে। সিলেবাস শেষ করতে পড়ানোর গতি বাড়ানো হবে। পুরশুড়ার ভাঙামোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল রক্ষিত জানান, সিলেবাস শেষ করতে বাড়তি ক্লাস নেওয়া শুরু হয়েছে। আরামবাগের ডহরকুন্ডু শ্রীরামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেড মাস্টার্স এন্ড হেড মিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সদস্য প্রণবকুমার নায়েকের অভিমত, সার্বিক ভাবে বা বন্যা বিধ্বস্ত এলাকার জন্য সিলেবাস কিছুটা ছোট করে দেওয়া উচিত। সরকারি ভাবে এমন নির্দেশ অন্তত দেওয়া হোক, যাতে প্লাবিত এলাকার স্কুলগুলি নিজেদের মতো সিলেবাস করে নিতে পারে। যে সব স্কুল জলের তলায়, তাদের ছুটি বাড়ানো হোক।

উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকে ১১৯টি প্রাথমিক স্কুল বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার প্রায় ৬০টি স্কুলে খুলেছে বলে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদ সূত্রের খবর। সংসদ সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘‘সিলেবাস শেষ করতে শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাস নিতে বলা হয়েছে।’’ এই দুই ব্লকে প্রায় ৩০টি উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। ধীরে ধীরে সেগুলিও খুলছে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতরের এক কর্তা জানান, পঠনপাঠনের ঘাটতি পূরণের বিষয়ে রাজ্য শিক্ষা দফতর কোনও নির্দেশিকা পাঠায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE