প্রতীকী ছবি।
সামনেই কালীপুজো, ছটপুজো। এই উৎসবে বাজি এবং ডিজের দৌরাত্ম্য রুখতে পথে নেমেছে নাগরিক সমাজ। হুগলিতে বিভিন্ন গণ-সংগঠন, পরিবেশকর্মী, সমাজকর্মী, সাধারণ মানুষ মিলে গড়ে তুলেছেন বাজি বিরোধী মঞ্চ। বাজি, ডিজের বিপদ নিয়ে পথসভা, লিফলেট বিলি করবে তারা। শব্দ এবং বায়ুদূষণের বিপদ আটকাতে ব্যবস্থার আর্জি জানিয়ে থানায় থানায়, প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
শব্দবাজি ফাটানো আইনত নিষিদ্ধ। অথচ ডানকুনি, চণ্ডীতলা, হরিপাল, ধনেখালি-সহ হুগলির নানা জায়গায় কারখানায় শব্দবাজি তৈরি হয় বলে অভিযোগ। কুটিরশিল্পের মতো বাড়ি বাড়ি বাজি তৈরি হয়। অভিযোগ, বেআইনি বাজি বন্ধে পুলিশ-প্রশাসন নিষ্ক্রিয়। কালীপুজোর আগে নিয়ম রক্ষার্থে কিছু শব্দবাজি আটক করা হয়। যদিও, তার আগেই প্রচুর বাজি বাজারে
ছড়িয়ে পড়ে।
উৎসবের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতির সম্ভাবনার দোহাই দিয়ে শব্দবাজি যাঁরা ফাটান, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে থানায় অভিযোগ জমা না পড়ার যুক্তিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ভূমিকাও চোখে পড়ে না।
শব্দবাজি এবং ডিজের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে বিশেষত কালীপুজোর আগে নাগরিক প্রতিবাদ হয়। তার জেরে শহরাঞ্চলে শব্দের দাপট কিছুটা কমেছে। কিছু ক্ষেত্রে ডিজের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে, গ্রামাঞ্চলে শব্দের লাগামছাড়া দাপট দেখা গিয়েছে। শুধু কালীপুজো নয়, বছরের বিভিন্ন সময়ে বাজি পোড়ানোর রেওয়াজ চলেই। পারিবারিক অনুষ্ঠানেও দেদার
বাজি ফাটে।
অথচ, এমনটা হওয়ার কথা নয়। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, সংশ্লিষ্ট রাজ্যে উৎসবের দিন নির্ধারিত দু’ঘন্টা বাজি (কম ধোঁয়া ছড়ানো এবং নির্দিষ্ট শব্দমাত্রার) পোড়ানো যাবে। নিষিদ্ধ বাজি বিক্রির দায় সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-র উপরে বর্তাবে।
জাতীয় পরিবেশ আদালত গত বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব রকম বাজি বিক্রি এবং ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট তা বহাল রাখে। করোনা পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে এ বারেও শব্দবাজির পাশাপাশি আতসবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।
নাগরিকদের একাংশ অবশ্য শুধু শব্দবাজি ও ডিজে বন্ধের পক্ষে। তাঁরা আতসবাজিকে ছাড়ের তালিকায় রাখতে চান। অপর অংশ এবং চিকিৎসকদের অনেকের মত, আতসবাজি প্রচুর দূষণ ছড়ায়। শ্বাসকষ্টের রোগী এবং করোনা সংক্রমিতদের পক্ষে তা ক্ষতিকর। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘করোনা আবহে সব ধরনের বাজি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের যে নির্দেশ রয়েছে, তা কার্যকর করুক প্রশাসন।’’
চন্দননগরের পরিবেশ অ্যাকাডেমির সভাপতি, পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং সম্পাদক শঙ্কর কুশারি বলেন, ‘‘আতসবাজি ব্যাপক বায়ুদূষণ করে, যা করোনা সংক্রমিতকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিতে পারে। উৎসব পালিত হোক মোম এবং প্রদীপের আলোয়।’’
পরিবেশকর্মীদের ক্ষোভ, গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে অন্তত ১২ জন শহিদ হয়েছেন। এ বছরেও দশমীতে বাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করে বালুরঘাটের এক মহিলা আইনজীবী ও তাঁর অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা প্রহৃত হন বলে অভিযোগ।
পরিবেশ অ্যাকাডেমির মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে পরিবেশ আদালত পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। ২০০৯ থেকে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৭০ জন মারা গিয়েছেন। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন বহু মানুষ। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করা হোক। তাতে আখেরে মানুষ এবং পরিবেশ— দুইয়েরই ভাল হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy