Advertisement
০৬ মে ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

মাথায় ১৮টি সেলাই নিয়েও ভোটের লাইনে 

ভোট-হিংসায় গত শনিবার মাথায় ১৮টি সেলাই পড়েছিল খানাকুল ২ ব্লকের নতিবপুরের ভোটার পরেশ কোটালের।

মাথায় সেলাই নিয়ে ভোট দিলেন পরেশ কোটাল (বাঁ দিকে)।

মাথায় সেলাই নিয়ে ভোট দিলেন পরেশ কোটাল (বাঁ দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ ০৮:৩৩
Share: Save:

কেন্দ্রীয় বাহিনী আসায় ছবিটা পাল্টে গেল একদিনের তফাতে।

ভোট-হিংসায় গত শনিবার মাথায় ১৮টি সেলাই পড়েছিল খানাকুল ২ ব্লকের নতিবপুরের ভোটার পরেশ কোটালের। তা সত্ত্বেও সোমবার দুপুরে নতিবপুর বিহারীলাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ফের ভোটের লাইনে দাঁড়ালেন তিনি। চোখে-মুখে ভয়ের চিহ্নমাত্র নেই। বুথের ভিতরে-বাইরে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাফের প্রহরা।

এ ছবি গত শনিবার, ভোটের দিন দেখা যায়নি। দু’এক জন লাঠিধারী পুলিশ ছিলেন। সে দিন দুপুরে ওই বুথের সামনেই বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ বাধে। গুলি চলে। লাঠির আঘাতে জখম হন পরেশ। গুলিতে জখম হন তাঁর ভাইঝি-সহ তিন জন।

সোমবার ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে পরেশ বলেন, ‘‘প্রথম দিন এই ব্যবস্থা থাকলে আমার মাথায় ১৮টা সেলাই হত না। আমার ভাইঝির পেটে গুলি লাগত না।”

শুধু পরেশ নন, একই কথা বলছেন আরামবাগের ২৮টি বুথে এ দিন পুনর্নির্বাচনের জন্য ভোটের লাইনে দাঁড়ানো বহু ভোটার। প্রতিটি বুথেই ভোটদানে উৎসাহ দেখা গিয়েছে। মোতায়েন হওয়া পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী বা র‌্যাফ শুধু বুথের নিরাপত্তাই দেখেনি, ১৫০-২০০ মিটার তফাতে একসঙ্গে তিন-চার জনকে জড়ো হতে দেখলেও হটিয়ে দিয়েছে। খানাকুল ২ ব্লকের চিংড়া পঞ্চায়েতের কুমারচক বুথে তৃণমূল এজেন্ট বসতে পারছেন না বলে অভিযোগ পেয়ে তাঁকে গ্রাম থেকে বুথেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

মহকুমার যে ২৮টি বুথে এ দিন ফের ভোট হল, সেখানে গত শনিবারের ভোটে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, পুড়িয়ে দেওয়া এবং জল বা কালি ঢেলে দেওয়ার ঘটনা যেমন ঘটেছিল, তেমনই বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট, বোমাবাজি এবং ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগও ছিল। সে দিন কোথাও সে ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা না-মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বহু ভোটার।

সোমবার নিরাপত্তায় মোড়া আরামবাগের আরান্ডি ২ পঞ্চায়েতের ধামসা পিসি সেন হাই স্কুলে ভোট দিয়ে স্থানীয় শীতলপুর গ্রামের শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, “সাধারণ মানুষ এ রকমই ভোট চান। গত শনিবার ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও রাজনৈতিক দলগুলির মারপিটে প্রাণভয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। আগেই এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা হল না কেন, বুঝতে পারছি না।’’

পুনর্নির্বাচনের জন্য শুক্রবার রাত থেকেই নিরাপত্তার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। ভোটারদের আশ্বস্ত করতে মাইকে প্রচারও চলতে থাকে। এ দিন ‘ভোটের ডিউটি’তে থাকা বিভিন্ন বুথের পুলিশকর্মীরা জানিয়েছেন, উপযুক্ত পরিবেশ পেলে মানুষ যে ভোট বিমুখ হন না, তা পরিষ্কার। এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, “কোথাও বিন্দুমাত্র অশান্তি হয়নি। মানুষ খুশি।’’

গোলমাল না হলেও হিয়াৎপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফের ভোট দিতে এসে কিঞ্চিৎ ক্ষোভ প্রকাশ করে গেলেন আরামবাগের আরান্ডি ২ পঞ্চায়েতের হিয়াৎপুরের বাসিন্দারা। গতবার (২০১৮) তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বোমা-গুলির লড়াইয়ে তাঁদের দু’বার করে ভোট দিতে হয়েছিল। এ বারও (গত শনিবার) তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে ছাপ্পা মারার অভিযোগ ওঠে। ফলে, ফের ভোট হল।

এ দিন ভোট দিয়ে বেরিয়ে নিজের বাঁ হাতের তর্জনী এবং মধ্যমায় ভোটের কালি দেখিয়ে বছর সত্তরের বৃদ্ধ ইশাহক বেগ বলেন, “একটা কালি শনিবারের (তর্জনী), একটা আজকের (মধ্যমা)। গত পঞ্চায়েত ভোটের পর ফের এ বারও একই কাণ্ড হওয়ায় গ্রামটাই উপদ্রুত বলে চিহ্নিত হয়ে গেল। খুবই লজ্জার বিষয়।’’ মহম্মদ সফিক নামে এক প্রৌঢ়ের খেদ, ‘‘এ দিন ভোট শান্তিতে হল ঠিকই, কিন্তু গতবার গুলি-বোমা চলায় এ বার ভোটের দিন কড়া নিরাপত্তা থাকবে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE