শোকাহত পরিবার। ছবি: তাপস ঘোষ।
যে কাজ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, তাকে কি নিছক ‘মজা’ বলা চলে? বুধবার রাতে চাঁপদানির ছাই মাঠ এলাকার বাসিন্দা রহমত আলির (২১) মৃতদেহ ঘিরে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৬ নভেম্বর কাজের শেষে কারখানায় হাত মুখ ধুচ্ছিলেন নর্থ ব্রুক জুটমিলের ওয়েন্ডিং বিভাগের ঠিকা শ্রমিক রহমত। অভিযোগ, ‘মজা’ করার জন্য রহমতের মলদ্বারে পাইপ ঢুকিয়ে যন্ত্র পরিষ্কার করার হাওয়া দিয়ে দেয় সহকর্মী শাহজাদা খান। তীব্র গতিতে বেরনো সেই হাওয়ায় রহমতের পেট ফুলে যায়। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় অন্য সহকর্মীরা তাঁকে প্রথমে গৌরহাটী ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভর্তি করানো হয় চুঁচুড়া হাসপাতালে। পরে তাঁকে পরিজনরা কলকাতার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান।
চিকিৎসকরা জানান, তীব্র গতির ওই হাওয়ার চাপে রহমতের লিভার ফুটো হয়ে গিয়েছিল। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল দু’টো কিডনিই। অস্ত্রোপচার করা হলেও মৃত্যুর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি চিকিৎসকরা। গত ১৭ নভেম্বর অস্ত্রোপচারের পর কিছুটা শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় রহমতের। সেই সময়ই তাঁর পরিজনরা শাহজাদার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। তারপর থেকেই ভয়ে এলাকাছাড়া ওই যুবক।
শেষ রক্ষা হয়নি রহমতেরও। মঙ্গলবার রাত থেকেই ফের শারীরিক অবস্থায় অবনতি হয় তাঁর। বুধবার সকালে মারা যান বছর একুশের ওই যুবক।
বুধবার রাতে যখন রহমতের মৃতদেহ আসে তখন এলাকায় তিলধারণের জায়গা ছিল না। অভিযুক্তের শাস্তিও জানান সকলে। মিলশ্রমিক মহম্মদ গোলামের কথায়, ‘‘রহমত এত মিশুকে ছিল! সকলে ওকে ভালবাসত। মজা করত। কিন্তু শাহজাদার এমন আচরণকে কি
মজা বলা যায়?’’
রহমতের পরিজনদের অভিযোগ, শুধু শাহজাদা নয়। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কারখানার আরও কয়েকজন কর্মী। চোখের জল বাঁধ মানছে না রহমতের বাবা সামসুদ্দিনের। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ভয়ঙ্কর মৃত্যু যেন কারও না হয়। অভিযুক্তের উপযুক্ত শাস্তি হোক। যাতে এমন ‘মজা’ করার ইচ্ছা বা সাহস কারও না হয়।’’
চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রথমে মৃতের পরিবারের তরফে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। পরে অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ওই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কি না, তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy