বন্ধ কারখানার খাসজমি প্রোমোটারকে না দিয়ে বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল সম্প্রসারণের জন্য দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ওই হাসপাতালের সামনে অবস্থান চলছে। পাশাপাশি, কলকাতা, হাওড়া-হুগলির নানা জায়গায় প্রতীকী অবস্থান হয়েছে। এ বার গণদাবি পাঠানো হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। গণস্বাক্ষর সংগ্রহ চলছে হাওড়ার গঙ্গাধরপুর, হুগলির শ্রীরামপুর, হরিপাল ও চুঁচুড়া এবং সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালেও।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, শ্রমজীবী বহুদিন ধরে সাধারণ মানুষকে ন্যায্য মূল্যে আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে আসছে। বেলুড়ে হাসপাতাল সম্প্রসারণের জন্য বন্ধ ইন্দো-জাপান কারখানার খাসজমি তাদের দেওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ভূমি দফতরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের আবেদন, সমাধানের ব্যবস্থা করে যেন ওই খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির ভিত্তিতে শ্রমজীবীকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ৩০০ শয্যার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল করা হবে।
হাসপাতালের সদস্যেরা জানান, ইতিমধ্যেই দু’হাজারের বেশি মানুষ সই করেছেন। দাবিপত্র ই-মেলে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হচ্ছে। বহু মানুষের বক্তব্য, হাসপাতাল সম্প্রসারিত হলে অনেক মানুষ চিকিৎসার সুবিধা পাবেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার নবান্নে ভূমি দফতরের আধিকারিকদের আলোচনা হয়। হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকারের দাবি, আলোচনা সদর্থক হয়েছে। ভূমি দফতরের তরফে তাঁদের বলা হয়েছে, নির্বাচনী বিধির কারণে এখনই প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন মিটলে খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপাতত অবস্থান তুলে নেওয়ারও অনুরোধ করা হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে সংগঠন ও সহযোগী মঞ্চের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
হাওড়া জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, আন্দোলনকারীদের আগেই বলা হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট দফতর নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে ফাইল পাঠাবে। তার পরেই দফতরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। সরকারের নীতি অনুযায়ী গোটা বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। আবেদন অনেকেই করতে পারেন। সব ঠিক থাকলে তারা জমি পাবে। জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি জানান, পদ্ধতি শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
হাসপাতালের সহ-সভাপতি ফণীগোপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বড় হাসপাতাল চালানোর অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এখানেও তিনশো শয্যার হাসপাতাল আমরা চালাতে পারব।’’ গৌতমের বক্তব্য, আইন অনুযায়ী বন্ধ কারখানার খাসজমি জনস্বার্থে ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা। সেই হিসাবেই ফাঁকা পড়ে থাকা খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে হাসপাতাল সম্প্রসারণের জন্য দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। গৌতম বলেন, ‘‘শুরু থেকে ভূমি দফতরের সদর্থক ভূমিকা থাকলে আন্দোলনে নামতে হত না।’’ হাসপাতালের সহযোগী মঞ্চের আহ্বায়ক মেঘনাদ দাস বলেন, ‘‘এই হাসপাতালের মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষ উপকৃত হন। আমরা তাই এই আন্দোলনের পাশে আছি।’’
গৌতম জানান, বরাহনগরের বাসিন্দা, ৮৭ বছরের অর্ণবকুমার সরকার শ্রমজীবী হাসপাতালের শুভানুধ্যায়ী। তিনি চিঠি লিখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, ওই জমিতে হাসপাতাল সম্প্রসারিত হলে সেই কাজে তিনি প্রায় ৪ লক্ষ টাকা দান করবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)