অসমাপ্ত রেললাইনের কাজ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
এখনও তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপথ নির্মাণে ভাবাদিঘি-জট কাটেনি। প্রশাসনিক স্তরে তেমন উদ্যোগ নেই বলেও অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে বুধবার সংসদের অধিবেশনে দ্রুত জটিলতা কাটিয়ে রেলপথের পক্ষে সওয়াল করলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তাতে কিছুটা আশার আলো দেখছেন ভাবাদিঘির সাধারণ মানুষ এবং আন্দোলনকারীরা।
সৌমিত্র বলেন, “সমস্যাগুলি দ্রুত মিটিয়ে যত শীঘ্র্র সম্ভব রেলপথ চালু করার জন্য রেলমন্ত্রীকে জানিয়েছি।” সংসদে সৌমিত্র জানান, তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুরের মধ্যে মাত্র ২-৪ কিলোমিটারে গোলমালের জন্য রেলপথ সম্পূর্ণ হয়নি। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। ভাবাদিঘির নকশা পরিবর্তন দরকার। সেটা করা উচিত। রাজ্য সরকার জমি না দিতে চাইলে, সেটা দেখা দরকার। প্রসঙ্গত এই বিষয় নিয়ে আগেও সংসদে তুলেছিলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ।
তবে, ওই রেলপথ নির্মাণে জট শুধু গোঘাট-১ ব্লকের ভাবাদিঘিতেই সীমাবদ্ধ নয়। ৭ কিলোমিটার তফাতে গোঘাট-২ ব্লকের পশ্চিম অমরপুরেও জট রয়েছে। ভাবাদিঘিতে দিঘি বাঁচিয়ে রেলপথ নিয়ে যাওয়ার আন্দোলন চলছে দশ ধরে। পশ্চিম অমরপুরে জমির দাম এবং নিকাশি ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন জারি আছে।
ভাবাদিঘির ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’র সম্পাদক সুকুমার রায় বলেন, “দিঘি ভরাট করে রেলপথ নিয়েই আমাদের আপত্তি। রাজ্য সরকার নতুন করে জমি অধিগ্রহণ না করতে চাইলে আমরা দিঘির উত্তরপাড়াটা বিনামূল্যে ছেড়ে দেব বলেছি। কিন্তু সরকারি তরফে কোনও উদ্যোগ নেই। এখন কেন্দ্রীয় স্তরে বিষয়টা নিয়ে ভাবাতে পারলে ভাল।” তাঁর অভিযোগ, “রেলপথের জট স্রেফ রাজ্য সরকারের জমি অধিগ্রহণের ভুল প্রক্রিয়ার জন্য।”
পশ্চিম অমরপুরে ‘গ্রাম বাঁচাও, রেল চালাও’ কমিটির সম্পাদক ফটিক কাইতির বক্তব্য, “২০১০-এর শুনানিতে জমির মূল্য ধার্য হয় কাঠাপিছু ১৪ হাজার ৬৫০ হাজার টাকা। জমির দাম কাঠাপিছু অন্তত ৭৫ হাজার টাকা চাইছি আমরা। জমির দামটা হয়তো খুব একটা সমস্যা হবে না। কিন্তু আমাদের পুরো এলাকাটি সমতল থেকে অন্তত পাঁচ ফুট নিচু। জল নিকাশির জন্য ‘গার্ডার ব্রিজ’ না হলেও উন্নত নিকাশি ব্যবস্থার পরিকাঠামোর নিশ্চয়তা চাই। রাজ্য সরকারের উদাসীনতার জন্য কাজ থমকে।”
দু’টি ক্ষেত্রেই উদাসীনতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হুগলির জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি। তিনি বলেন, “জটিলতা কাটাতে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সমাধানের রাস্তা খোঁজা হচ্ছে।’’
পূর্ব রেল জানিয়েছে, রাজ্য সরকার স্থানীয় সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছে। সমস্যা মিটলেই কাজ শুরু হবে। তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর ৮২.৪৭ কিমি রেলপথের মধ্যে হুগলিতে তারকেশ্বর থেকে আরামবাগ হয়ে গোঘাট পর্যন্ত ৩৩.৯৪ কিলোমিটারের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। সেই পথে ট্রেন চলছে। বাঁকুড়ার দিকে বিষ্ণুপুর থেকে ময়নাপুর পর্যন্ত ২২.৬৮ কিলোমিটারের কাজও শেষ হয়ে ট্রেন চলছে। গোঘাট থেকে ভাবাদিঘির ৯৫০ মিটার বাদ দিয়ে কামারপুকুর পর্যন্ত ৫.৫০ কিমির কাজ হয়ে গিয়েছে। বাকি আছে কামারপুকুর থেকে বাঁকুড়ার জয়রামবাটী পর্যন্ত ৩.৩০ কিমি-র কাজ। এর মধ্যে ০.৭৫৫ কিমি জমি রেলকে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ২.৫৪৫ কিমি অধিগ্রহণ করা হলেও ক্ষতিপূরণ বিলি করা হয়নি। বাকি জয়রামবাটী থেকে ময়নাপুর ১৭.০৫ কিমি জমি রেলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy