Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Durga Puja 2023

জীর্ণ জমিদার বাড়িতে আজও পুজো পান দুর্গা

রাধাজীবনের তিন কন্যা, এক পুত্র ছিল। সেই ছেলে অকালেই চলে যান। ভেঙে পড়েন রাধাজীবন। তখন জমিদারির হাল ধরেন রানাঘাটের জমিদার বংশের সন্তান বিনোদবিহারী বিশ্বাস।

বৈঁচিগ্রামে সিংহ বাড়ির ৩০০ বছরের প্রাচীন দুর্গা প্রতিমা।

বৈঁচিগ্রামে সিংহ বাড়ির ৩০০ বছরের প্রাচীন দুর্গা প্রতিমা।

বিশ্বজিৎ মণ্ডল
বলাগড় শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:০৬
Share: Save:

প্রাসাদোপম বাড়ি। ঘরের সংখ্যা ১০৮। অধিকাংশই আর বাসযোগ্য নেই। জমিদার বাড়ির বৈভব অতীত। তবে আড়াইশো বছরের বেশি সময় ধরে হুগলির সোমরার সুখড়িয়াতে এই বিশ্বাসবাড়ির দুর্গাপুজোয় কখনও ছেদ পড়েনি। জীর্ণ প্রাসাদেও তা চলে আসছে। এই বাড়ি বরেণ্য পরিচালক মৃণাল সেনের স্মৃতি বিজড়িত।

ইতিহাস গবেষকদের মতে, বহু আগেই জমিদারি উঠে গিয়েছে। তবু বংশের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে পুজোর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন বংশের উত্তরসূরীরা। তাঁদেরই এক জন ভাস্কর বিশ্বাস জানান, পরিবারের জমিদারির পত্তন শ্রীপুরের মিত্র মুস্তাফি পরিবারের হাত ধরে। বাড়ির ঠাকুরদালান তৈরি করেছিলেন পরিবারের তৎকালীন কর্তা রাধাজীবন মিত্র মুস্তাফি। বসবাসের জন্য বিরাট অট্টালিকা, পরে কয়েকটি মন্দিরও তৈরি করেছিলেন তিনি।

রাধাজীবনের তিন কন্যা, এক পুত্র ছিল। সেই ছেলে অকালেই চলে যান। ভেঙে পড়েন রাধাজীবন। তখন জমিদারির হাল ধরেন রানাঘাটের জমিদার বংশের সন্তান বিনোদবিহারী বিশ্বাস। বিনোদবিহারীর সঙ্গে রাধাজীবনের এক মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। পরে বিনোদবিহারীর হাতেই জমিদারি তুলে দেন রাধাজীবন। পরিবারের জামাইয়ের হাতে জমিদারির বহর আরও বাড়ে। তখনই বাড়ির নাম হয় ‘বিশ্বাসবাড়ি’। অর্থের অভাব ছিল না। বছরভর জমিদার বাড়িতে উৎসব, পুজো, অনুষ্ঠান লেগেই থাকত৷ দশভূজার পুজো তো ছিলই। সঙ্গে আনন্দময়ী কালীর পুজো। জগদ্ধাত্রীর আরাধনা, রাধাকৃষ্ণের নিত্যসেবাও হত। এখানে দেবীর বাহন ঘোটকরূপী সিংহ। আগে পুজো হত শাক্ত মতে। ছাগ ও মোষ বলি হত। পরে বৈদিক ও বৈষ্ণব মতে পুজো শুরু হলে পশুবলি বন্ধ হয়। তার পরিবর্তে সন্ধিপুজো, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে চালকুমড়ো ও আখ বলি হয়। প্রসাদে ফল, মিষ্টি, লুচি-সুজি দেওয়া হয়। রান্না করা ভোগ দেওয়া হয় না। তবে, চাল, ডাল, আনাজ, মশলা, তেল, নুন প্রভৃতি রান্নার যাবতীয় উপকরণ ঠাকুরের সামনে দেওয়া হয়। পুজোর পরে সেগুলি রান্না করে সকলকে পরিবেশন করা হয়।

এই বাড়িতেই সিনেমার শ্যুটিং করেছিলেন মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো পরিচালক। ইতিহাস গবেষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মৃণাল সেন তাঁর আকালের সন্ধানে সিনেমার শ্যুটিং এই বিশ্বাসবাড়ির দালান থেকেই শুরু করেছিলেন। পরে অনেক বার তিনি এ বাড়িতে এসেছেন।’’

নানা স্মৃতিচিহ্ন আগলেই দুর্গাপুজোর সময়ে আনন্দে মাতে বিশ্বাসবাড়ি। এই বিরাট সম্পত্তি সংস্কারের সাধ্য এখনকার প্রজন্মের নেই। তবে জমিদার বাড়ির মন্দিরগুলি সংস্কার করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

DurgaPuja Festival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE