E-Paper

তরুণীকে ছুরি মারাতেই কি শালিমারে সংঘাত

সংর্ঘষের পর রবিবারও থমথমে ছিল শালিমারের পাঁচ নম্বর গেট চত্বর। বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। ওই ঘটনায় পুলিশ দুই গোষ্ঠীর দুই নেতা সুলতান শেখ ও রবি কামতেকে গ্রেফতার করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৫১
উত্তপ্ত পরিস্থিতি শালিমারে।

উত্তপ্ত পরিস্থিতি শালিমারে। —নিজস্ব চিত্র।

হাওড়ার শালিমারে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে শনিবার রাতের সংঘর্ষের ঘটনা বিক্ষিপ্ত নয়, এলাকা দখলের লড়াইয়ে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ছাইচাপা আগুনের স্ফুলিঙ্গ। শনিবার রাতের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এমনটাই মনে করছে।

সংর্ঘষের পর রবিবারও থমথমে ছিল শালিমারের পাঁচ নম্বর গেট চত্বর। বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। ওই ঘটনায় পুলিশ দুই গোষ্ঠীর দুই নেতা সুলতান শেখ ও রবি কামতেকে গ্রেফতার করেছে। অভিযোগ, শাসক দলের মদতে শালিমার চত্বরে চলা অন্ধকার সাম্রাজ্যের দখল নিতে এই দুই নেতার মধ্যে গত কয়েক মাস ধরেই লড়াই চলছে। আর তা থেকেই ফের অশান্ত হয়ে হয়ে উঠেছে শালিমার।

গত জুলাই মাসে টোটো স্ট্যান্ড দখল নিয়ে প্রতিবাদ করায় শালিমার চত্বরের দখলদার গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি বস্তির বাসিন্দাদের মারধর, ভাঙচুর করে ‘শিক্ষা’দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এলাকার ট্যাক্সি ও টোটো স্ট্যান্ড থেকে তোলাবাজি, শালিমার ইর্য়াডের দখলদারি থেকে মদের ঠেকের মোটা ‘নজরানা’ সবটাই রবি কামতের নিয়ন্ত্রণে চলে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। অভিযোগ, তার মাথায় স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার হাত। কিন্তু ওই গোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্ত দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধী সুলতান শেখের গোষ্ঠী মেনে নিতে না-পারায় এলাকায় অশান্তি বাড়ছিল বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বিশেষ করে তোলা না দিলে কথায় কথায় লোকজনকে মারধর, খুনের হুমকি বরদাস্ত করছিল না নেপালি পাড়ার সুলতান গোষ্ঠী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে বন্ধ করে দেওয়া সুলতানের জুয়ার ঠেক ধনতেরাস উপলক্ষে ফের শুরু হয়। তাতেই গোলমালের সূত্রপাত। অভিযোগ, সুলতানের বিরোধী রবি কামতে গোষ্ঠীর লোকজন বটানিক্যাল গার্ডেন থানার এক প্রাক্তন পুলিশ কর্মীকে ‘খবর’ দিয়ে শুক্রবার রাতে ওই ঠেকে পুলিশি হানার ব্যবস্থা করে। অভিযোগ, ওই পুলিশ কর্মীকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হলেও তাঁর নিয়মিত আসা, যাওয়া ছিল শালিমারে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ফের জুয়ার ঠেক বসানোর খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই জুয়ার বোর্ড ভেঙে দেয় এবং সুলতানের কয়েক জন লোককে মারধরও করে।

এই জুয়ার ঠেক বন্ধ করার ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে শনিবারের রাতের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন দুষ্কৃতী রবি তার দলবল নিয়ে এলাকায় একটি চাটের দোকানের পাশে বসে মদ খাচ্ছিল। অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় মদের চাট বিক্রেতা এক তরুণীকে ক্রমাগত বিরক্ত করছিল সে। উত্ত্যক্ত করতে করতে একটা সময়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রবি ওই তরুণীর হাতে আঘাত করে বলে অভিযোগ। তাঁর হাত থেকে রক্ত ঝরছে দেখে বিষয়টি সুলতানকে জানান এক যুবক। তখন সুলতান আক্রান্ত ওই তরুণীর ভাইয়ের মোবাইলের দোকানে বসেছিল। তরুণীর হাত ক্ষতবিক্ষত করার খবর পেয়েই সে তার দলবল নিয়ে রবির উপরে চড়াও হয় বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। তখনই রবি ও সুলতান, দুই দুষ্কৃতীর গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে নেপালি পাড়া। দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট, ইটবৃষ্টি শুরু হয়। রাত ১০টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। এর পরে পুলিশ লাঠি চালিয়ে দু’পক্ষকে সরিয়ে দেয় এবং রবি ও সুলতানকে গ্রেফতার করে।

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ওই এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। অশান্তি করলেই কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে যে তরুণীর হাত কাটার অভিযোগ উঠেছে তাঁর সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shalimar police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy