শুধু পুত্র নয়, নাবালিকা কন্যাও ছিল নির্যাতকের ভূমিকায়! হাওড়ার বাঁকড়ায় সোদপুরের তরুণীকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শ্বেতা খানের পুত্র আরিয়ান খান এবং কন্যাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বুধবার কলকাতার গল্ফ গ্রিন এলাকা থেকে তরুণীকে নির্যাতনে অভিযুক্ত আরিয়ান খানকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগেই কলকাতার একটি বাড়িতে পাওয়া যায় শ্বেতার কন্যাকে। দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয় ডোমজুড় থানায়। এখনও ‘নির্যাতনকারী’ এবং পর্নকাণ্ডে অভিযুক্ত শ্বেতার খোঁজ চলছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের তরুণীকে মাসের পর মাস বাঁকড়ার ফ্ল্যাটবাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তিন জনের বিরুদ্ধে। অভিযোগপত্রে শ্বেতা, তাঁর পুত্র আরিয়ান ছাড়াও নাবালিকা মেয়ের নাম রয়েছে। সেই অনুযায়ী তিন জনের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। পাঁচ দিনের মাথায় অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনকে ধরতে পেরেছে তারা। হাওড়া পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) সুরিন্দর সিংহ জানান, সূত্র মারফত খবর পেয়ে বুধবার পুলিশের একটি দল গল্ফ গ্রিনে যায়। সেখানে একটি বাড়ি থেকে আরিয়ানকে পাকড়াও করা হয়। ওই বাড়িটি তাঁর কোনও আত্মীয় বা বন্ধুর না কি অন্য কারও, তা তদন্তসাপেক্ষ। অন্য দিকে, শ্বেতার এক মেয়েকেও আটক করে ডোমজুড় থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কারণ, অভিযোগপত্রে তাঁর নামও ছিল ‘নির্যাতনকারী’দের তালিকায়। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্ত নাবালিকা হওয়ায় তাকে জুভেনাইল বোর্ডে হাজির করানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় চাকরি দেওয়ার টোপ দিয়ে মাস ছয়েক আগে সোদপুরের এক তরুণীকে দেখা করতে বলেছিলেন আরিয়ান নামে ওই যুবক। তরুণীর পরিবারের দাবি, সমাজমাধ্যমে আলাপ হয়েছিল দু’জনের। তাদের মেয়েকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে গিয়ে পানশালায় কাজ করতে বাধ্য করেন আরিয়ান এবং তাঁর মা। পরে পর্ন ভিডিয়োয় অভিনয় করানোর চাপ দেওয়া হত বলে অভিযোগ। দিনের পর দিন ফ্ল্যাটে আটকে রেখে তরুণীকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়।
শেষে গত শুক্রবার লুকিয়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে পালিয়ে যান সোদপুরের ওই তরুণী। তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি দেখে চমকে যান পরিবারের লোকজন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই তরুণী। পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবারই অভিযুক্ত শ্বেতা এবং তাঁর দুই সন্তান বাঁকড়ার ফ্ল্যাট থেকে পালিয়ে যান। মনে করা হচ্ছে, তাঁরা আলাদা আলাদা ভাবে বেরিয়েছিলেন এবং পৃথক পৃথক জায়গায় গা-ঢাকা দেন।
আরও পড়ুন:
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে ডিসিপি সুরিন্দর বলেন, ‘‘আদালতের অনুমতি পেলেও অভিযুক্তদের ফ্ল্যাটে তল্লাশি হয়নি। সোদপুরের ওই তরুণী ছাড়া আর কেউ এখনও এঁদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাননি। সোদপুরের ওই পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ করেছে পুলিশ। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শ্বেতার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাবালিকা মেয়েকে জুভেনাইল বোর্ডে হাজির করানো হবে। এখনও শ্বেতার খোঁজ চলছে।’’