Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
coronavirus

Coronavirus: শিক্ষক আসছেন বাড়ি বয়ে, পড়ার অভ্যাস ফিরছে খুদেদের

করোনা আবহে স্কুল না খুললে কী হবে, মাস্টারমশাই নিজেই বাড়ি বয়ে আসছেন পড়াতে। তাঁর পথ চেয়ে তৈরি হচ্ছে খুদে পড়ুয়ারা।

উদ্যোগ: বাড়িতে চলছে ক্লাস।

উদ্যোগ: বাড়িতে চলছে ক্লাস। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পীযূষ নন্দী
পুরশুড়া শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২১ ০৭:২৭
Share: Save:

এখন আর সারা সকাল এ দিক-সে দিক খেলে বেড়াচ্ছে না ওরা। পুরনো অভ্যাসে বইখাতা নিয়ে বসছে।

করোনা আবহে স্কুল না খুললে কী হবে, মাস্টারমশাই নিজেই বাড়ি বয়ে আসছেন পড়াতে। তাঁর পথ চেয়ে তৈরি হচ্ছে খুদে পড়ুয়ারা।

হুগলির পুরশুড়ার চিলাডাঙি পঞ্চায়েত আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এলাকা। বহু মানুষ খেতমজুরি বা দিনমজুরি করেন। ছেলেমেয়েদের অনলাইন পড়াশোনার জন্য স্মার্টফোন বা কম্পিউটার কেনার সাধ্য নেই। অনেক পরিবারের ছেলেমেয়েই পড়ে চিলাডাঙি উত্তরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দিন দশেক ধরে বাড়ি বয়ে তাদের পড়াতে যাচ্ছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রথীন ভৌমিক। কারও বাড়ির দাওয়ায়, কারও গুদামঘরে ১০-১২ জন করে পড়ুয়া নিয়ে চলছে ক্লাস।

ওই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। পড়ুয়ার সংখ্যা ১২০। মূলত চিলাডাঙি উত্তরপাড়া, সংলগ্ন সুদরুশ ও বলরামপুরের একাংশের ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়। রথীনবাবু চিলাডাঙির বিশুইপাড়া, মান্নাপাড়া, জানাপাড়া, সুঁদরুশ গ্রামের দাসপাড়া, বলরামপুরের শেখপাড়ায় পালা করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, তাঁকে নিয়ে স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন চার জন। সহকর্মীদেরও পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তাঁদের মধ্যে সৌমিত্র বেরা আগামী সপ্তাহ থেকে ওই দায়িত্ব নেবেন বলে জানিয়েছেন।

রথীনবাবুর বক্তব্য, ‘‘করোনা পর্বে ছাত্রছাত্রীরা অনেকটাই বইবিমুখ। বলতে দ্বিধা নেই, শিক্ষকরাও শিক্ষাব্যবস্থা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। সবার বাড়িতে অনলাইনে পড়ার পরিকাঠামো নেই। যেমন, পঞ্চম শ্রেণির ২১ জন পড়ুয়ার মধ্যে অনলাইন ক্লাসের সুযোগ নিতে পারছে ১০ জন। বাকিদের উপায় নেই। তাই এই সিদ্ধান্ত। সবটাই কোভিড-বিধি মেনে হচ্ছে।’’ বই পড়ানোর পাশাপাশি পড়ুয়াদের শারীরশিক্ষার পাঠও দিচ্ছেন তিনি।

রথীনবাবুর উদ্যোগে খুশি ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা। অনেকেই জানান, স্কুল না-থাকায় ছেলেমেয়েরা পড়ার অভ্যাস ভুলতে বসেছিল। রথীনবাবুর জন্য সেই অভ্যাস ফিরছে। শিক্ষকের পাশে দাঁড়াতে অভিভাবকরা চাঁদা তুলে ব্ল্যাকবোর্ড-চক জোগাড় করছেন।

চিলাডাঙির জানাপাড়ার সুবর্ণ দাস প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। তাঁর বাবা পল্টু দাস বলেন, ‘‘স্কুল না-থাকায় বাড়িতেও মেয়ের পড়াশোনা হচ্ছিল না। মাস্টারমশাইয়ের জন্য মেয়ে আবার স্কুলে যাওয়ার মতো করে তৈরি হচ্ছে। মাস্টারমশাইকে ধন্যবাদ। এক বিঘা জমি চষে সংসার চালাতে হিমশিম খাই। স্মার্টফোন বা কম্পিউটার কিনব কোথা থেকে! অনেকেরই এই অবস্থা। মাস্টারমশাই আসায় বাচ্চাদের পড়াশোনাটা আবার হবে।’’ একই কথা জানিয়েছেন সুঁদরুশ গ্রামের দাসপাড়ার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সন্দীপ দাসের বাবা দুলাল দাস, চিলাডাঙি গ্রামের বিশুইপাড়ার এক অভিভাবক।

রথীনবাবুর উদ্যোগ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের পুরশুড়া দক্ষিণ চক্রের পরিদর্শক অর্ণব সিংহরায় বলেন, ‘‘আমাদের চক্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে মাস চারেক। কিন্তু পরিকাঠামো না থাকায় ছাত্রছাত্রীদের একাংশ তাতে যোগ দিতে পারছে না। রথীনবাবু তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়াচ্ছেন। নিঃসন্দেহে ভাল প্রচেষ্টা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE