Advertisement
০৯ মে ২০২৪
Chinsurah Municipality

মজুরির দাবিতে অবরোধ চুঁচুড়া পুরসভায়, হুলস্থুল

বেলা ১১টা নাগাদ পুরপ্রধান অমিত রায় এসে গেট খুলে দিলে বললেও আন্দোলনকারীরা শোনেননি। দু’পক্ষের বচসা বাধে। ধাক্কাধাক্কি হয়।

পুরসভার গেটে বিক্ষোভ চলছে। নিজস্ব চিত্র

পুরসভার গেটে বিক্ষোভ চলছে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৪৮
Share: Save:

চলতি মাসের সপ্তাহখানেক পার। মেলেনি মজুরি। এ নিয়ে হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের অবরোধ ঘিরে বুধবার হুলস্থুল বাধল। লাটে উঠল পুর-পরিষেবা। আন্দোলনকারী এক মহিলাকে চড় মারার অভিযোগ উঠল পুরপ্রধানের সঙ্গী এক মহিলার বিরুদ্ধে। গোটা পরিস্থিতিতে পুরসভার হাঁড়ির হাল ফের সামনে এল!

মজুরির দাবিতে সকাল ৯টা নাগাদ অস্থায়ী কর্মীরা পুরভবনের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন। চুঁচুড়া-ত্রিবেণী রুটের বহু গাড়ি দাঁড়িয়ে পরে। জেলা সদর হাসপাতালে যাওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের অনুরোধে আধ ঘণ্টা পরে অবরোধ ওঠে। আন্দোলনকারীরা এর পরে পুরসভার গেট বন্ধ করে, তার সামনে বসে পড়েন। ফলে, কর্মী বা আধিকারিকরা পুরসভায় ঢুকতে পারেননি।

বেলা ১১টা নাগাদ পুরপ্রধান অমিত রায় এসে গেট খুলে দিলে বললেও আন্দোলনকারীরা শোনেননি। দু’পক্ষের বচসা বাধে। ধাক্কাধাক্কি হয়। অভিযোগ, তখনই পুরপ্রধানের সঙ্গে থাকা জনৈক মহিলা এক অস্থায়ী মহিলা কর্মীর গালে চড় মারেন। পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যায়। পুরপ্রধানকে ক্ষমা চাইতে হবে, এই দাবি ওঠে। বেগতিক বুঝে তৃণমূল কর্মী এবং পুলিশ পুরপ্রধানকে সরিয়ে নিয়ে যান। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা অসীম অধিকারী বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন পুর-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, সেই প্রতিশ্রুতি রাখলেন না। আমাদের সংসার আছে। অবিলম্বে মজুরি না মেটালে আন্দোলন চলবে।’’

বিগত পুরবোর্ডে অস্থায়ী কর্মীরা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে টানা আন্দোলন করেছিলেন। তৎকালীন উপ-পুরপ্রধান অমিত রায় তাঁদের সঙ্গ দিয়েছিলেন। অসীমের ক্ষোভ, ‘‘এখন বুঝতে পারছি, অমিত রায় চেয়ারের লোভে তখন আমাদের পাশে থেকেছিলেন। এখন লোক নিয়ে এসে আমাদের গায়ে হাত তুলতেও ছাড়ছেন না।’’

অভিযোগ মানছেন না পুরপ্রধান। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দফতরে কিছু সমস্যার জন্য টাকা দিতে দেরি হচ্ছে। এ ভাবে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন মানা যাবে না।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘কেউ কাউকে চড় মারেননি।’’

আন্দোলনের জেরে কাজ না-হওয়ায় অনেকেই পুরসভায় এসে ফিরে যান। কাপাসডাঙ্গার বাসিন্দা লাল্টু দাস কর জমা দিতে এসেছিলেন। পুরসভায় ঢুকতে না-পেরে ফিরে যান। সাহাগঞ্জের বাসিন্দা, ষাটোর্ধ্ব বুদ্ধদেব পাল বলেন, ‘‘প্রখর রোদে মিউটেশনের কাজে এসেছিলাম। কাজ হল না।’’

পুরসভা সূত্রে খবর, এখানে প্রায় ২২০০ অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। ন্যুনতম মজুরি দৈনিক ২৭০ টাকা। প্রায় ছ’শো জনের মজুরি রাজ্য পুর উন্নয়ন সংস্থা (সুডা) দেয়। অর্থাৎ, প্রায় ১৬০০ জনের মজুরির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ জোগাড় করতে হয় পুরসভাকে। সঙ্গে পেনশন। পুরকর্তারা জানান, সুডা-র অর্থ ধরে মজুরি ও পেনশনে ব্যয় হয় ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। পুরসভার মাসিক আয় সাকুল্যে ৭০ লক্ষ। নামপত্তনের (মিউটেশন) আয় মজুরি খাতে ঢোকানো হয়।

পুরসভার ভূমিকায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তৃণমূলকে বিঁধে শহরের সিপিএম নেতা তথা পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা সমীর মজুমদার বলেন, ‘‘অকর্মণ্য শাসক দল কোনও চেয়ারেই সফল নয়। ওদের জন্য মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হল। মানুষই জবাব দেবে।’’ হুগলি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউ পুরসভায় প্রশাসক বসানোর দাবি তোলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chinsurah Municipality Chinsurah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE