E-Paper

ডেনিশ আমলে গঙ্গার পাড় ছিল খোলামেলা

ইতিহাসে এই দাবির সমর্থনে কোনও তথ্য নেই। জানা যাচ্ছে, ১৭৫৫ সালের ১৫ জুলাই বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁ’র কাছ থেকে ডেনিশ বণিকেরা শ্রীরামপুরে কুঠি নির্মাণ ও বাণিজ্য করার ফরমান পান।

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:২২
ডেনিশ আমলে শ্রীরামপুরের গঙ্গাপাড়। ‘শ্রী’-এর সৌজন্যে প্রাপ্ত ছবি।

ডেনিশ আমলে শ্রীরামপুরের গঙ্গাপাড়। ‘শ্রী’-এর সৌজন্যে প্রাপ্ত ছবি। Sourced by the ABP

শ্রীরামপুরে গঙ্গার তীরে ভাষা শহিদ স্মারক উদ্যানে প্রতি রবিবার পশুপাখির হাট বসছে। আয়োজক শ্রীরামপুর পুরসভা দাবি করেছে, ডেনিশ আমলে এখানে নাকি মশলাপাতি বেচাকেনা হত! সেই ঐতিহ্যের অনুসরণ করেই বর্তমানে এই হাট বসানো হচ্ছে।

ইতিহাসে এই দাবির সমর্থনে কোনও তথ্য নেই। জানা যাচ্ছে, ১৭৫৫ সালের ১৫ জুলাই বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁ’র কাছ থেকে ডেনিশ বণিকেরা শ্রীরামপুরে কুঠি নির্মাণ ও বাণিজ্য করার ফরমান পান। বাংলায় ডেনিশদের প্রথম বাণিজ্যকুঠি চন্দননগরের গোন্দলপাড়া থেকে সরে আসার প্রধান কারণ, ইংরেজ ও ফরাসিদের দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে তাদের ব্যবসার বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছিল। পরবর্তী কুঠি হিসাবে শ্রীরামপুরকে নির্বাচনের অন্যতম দু’টি কারণের প্রথমটি হল, গঙ্গাতীরের দুই বর্ধিষ্ণু জনপদ মাহেশ ও চাতরার মধ্যে এই অনুন্নত অঞ্চলকে তাঁরা নিজেদের মতো গড়ে নিতে পারবেন। দ্বিতীয় কারণ, শ্রীরামপুরের কাছেই অন্তর্বাণিজ্যের বৃহৎ কেন্দ্র শেওড়াফুলি হাট থাকায় দেশীয় মানুষজনের সঙ্গে তাঁদের ব্যবসায়িক লেনদেনের সুবিধা হবে। নিশান ঘাট বা ডেনমার্ক ট্যাভার্ন সংলগ্ন এলাকায় দিনেমাররা ব্যবসাকেন্দ্র করেছিল, এমন কোনও তথ্য ইতিহাসে নেই।

এর অন্তত বিয়াল্লিশ বছর পরে, অর্থাৎ, ১৭৯৭ সালে শ্রীরামপুরের গভর্নর কর্নেল ওলে বি বেচাকেনার জন্য একটি বাজার নির্মাণ করেন। যে বাজার ‘ক্রাউন মার্কেট’ নামে পরিচিত হয়। যার বর্তমান নাম ‘টিন বাজার’। এ প্রসঙ্গে আর একটি কথা, ইউরোপীয়দের নগর পরিকল্পনায় গঙ্গাকে যথাসম্ভব উন্মুক্ত রাখার কথা থাকত। যাতে গঙ্গার সৌন্দর্য ও শীতল বাতাস থেকে শহরবাসী বঞ্চিত না হন। আর, ট্যাভার্নে সময় কাটাতে আসা ইউরোপীয়দের শান্তিবিঘ্নিত হতে পারে জেনেও সংলগ্ন এলাকায় বিকিকিনি অসম্ভব ছিল।

প্রাচীন ঐতিহ্য এবং আঞ্চলিক ইতিহাস ও সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে রাজ্যের পর্যটন শিল্পে শ্রীরামপুর স্থান করে নিয়েছে। শ্রীরামপুর আদালত চত্বরে ডেনিশ গভর্নমেন্ট হাউস, সেন্ট ওলাফ চার্চ ও গঙ্গার তীর বরাবর বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ‘হেরিটেজ জ়োন’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উঠেছে। স্থিতাবস্থা বজায় রেখে এই সমগ্র অঞ্চলটির সৌন্দর্যায়নে আমাদের প্রত্যেকের সচেষ্ট হওয়া দরকার। ভাষা শহিদদের স্মৃতিতে তৈরি যে উদ্যান, সপ্তাহে এক দিন হলেও সেখানে পশুপাখির হাট ওই জায়গার গাম্ভীর্য ও মর্যাদার পক্ষে কতখানি সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেটাও ভেবে দেখা দরকার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Serampore Danish Indian History

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy