এক সময়ে বিত্তশালী পরিবার হিসাবে এলাকায় পরিচিতি ছিল। কিন্তু এখন ‘দৈন্যদশা’ চন্দননগরের দাস পরিবারের। ঘাড়ে ঋণের বোঝা। এই পরিস্থিতিতে সপরিবার আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগ। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে মৃত্যু হয়েছে গৃহকর্ত্রীর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন পরিবারের কর্তা এবং মেয়ে। শুক্রবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার সকালে চন্দননগরের বৈদ্যপোতা এলাকার একই পরিবারের তিন সদস্য, বাবা-মা ও মেয়েকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাঁদের সকলকে চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সুনীতা দাস নামে ওই পরিবারের গৃহকর্ত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তাঁর স্বামী ও কন্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, ঋণের দায়ে পরিবারের সকলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, দাস পরিবারের কর্তার নাম একেন্দ্রনাথ দাস। তাঁর বয়স ৮৭ বছর। স্ত্রী সুনীতা দাসের বয়স ৮৩ এবং তাঁদের কন্যা শর্মিষ্ঠা দাসের বয়স ৪৩ বছর। সকালে বৃদ্ধ দম্পতি এবং তাঁদের কন্যাকে বাড়িতে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায়। বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। মেয়ে এবং বাবার চিকিৎসা চলছিল হাসপাতালে। শর্মিষ্ঠার শারীরিক অবস্থা খানিক স্থিতিশীল হওয়ার পরে তাঁর মুখ থেকে শোনা গিয়েছে আত্মহত্যার চেষ্টার কথা। ওই মহিলা জানিয়েছেন, সংসারে অনটনের জন্য তিন জন ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের বাড়িতে কাজ করার মতো কেউ নেই। সংসারে অভাব। তাই...।’’ ওই পরিবারের এক ঘনিষ্ঠ জানান, তিন দিন আগে বাড়ির কর্তাকে বাইরে শেষ বার দেখেছেন প্রতিবেশীরা। তার পরে আর তাঁকে দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ‘‘ওই পরিবারের কেউ এলাকার কারও সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা করতেন না। আজ (শুক্রবার) সকলকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায়।’’
আরও পড়ুন:
স্থানীয়দের মাধ্যমে খোঁজখবর করে পুলিশ জানাচ্ছে, এক সময় ওই পরিবার খুবই বিত্তশালী ছিল। সচ্ছল অবস্থার কারণ, কোলিয়ারিতে পারিবারিক ব্যবসা ছিল এঁদের। তবে বর্তমানে একেন্দ্রনাথেরা আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। সেই মানসিক অবসাদের জেরে সপরিবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। আরণ্যক দাস নামে দাস পরিবারের এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘যাঁর মৃত্যু হয়েছে, তিনি সম্পর্কে আমার পিসি। এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পিসি, পিসেমশাই এবং দিদিকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পিসির মৃত্যু হয়েছে। তবে কী কারণ, বলতে পারব না।’’
গত ২৮ মে চন্দননগরেরই কলুপুকুর ভাগারধারে একই পরিবারের তিন জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সেখানে ঋণের দায়ে স্ত্রী ও মেয়েকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছিলেন গৃহকর্তা। কয়েক মাস আগে কলকাতার ট্যাংরা এলাকায় একই রকমের ঘটনার কথা উঠে আসে।