সময়ের আগে রোগীদের দুপুরের খাবার। তার জেরেই কি শনিবার শোরগোল হল চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে!
তখন বেলা সওয়া ১১টা হবে। হাসপাতালের তেতলায় মহিলাদের সাধারণ বিভাগে দুপুরের খাবার দেওয়া হচ্ছিল। যিনি পরিবেশন করছিলেন, তাঁর প্রতি হঠাৎ নার্সদের নির্দেশ— ‘খাবার বিলি বন্ধ করুন’। রোগিণীদের জন্য নির্দেশ এল ‘খাবার খাবেন না’।
চমকে যান সকলে। দু’এক জন রোগিণী সবে খাবার মুখে তুলেছিলেন। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দেন। হল কী! শোরগোল পড়ে যায়। চিন্তায় পড়েন রোগিণীদের পরিজনেরা। খাবারে নিশ্চয়ই স্বাস্থ্যহানিকর কিছু মিশে গিয়েছে— এমন জল্পনাও চলতে থাকে। শেষমেশ রোগীর খাবারের জন্য বরাত পাওয়া সংস্থার পক্ষে রান্নাঘরের দায়িত্বে থাকা কুন্তল বিশ্বাসের দাবি, সময়ের আগে খাবার চলে গিয়েছিল। তাই বন্ধ করে দিতে বলা হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ওয়ার্ডের সকলকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। সহকারী সুপার মৃন্ময় চক্রবর্তী কোনও ঝুঁকি না নিয়ে নিজে রান্নাঘরে গিয়ে খাবার চেখে দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘খাবার আগে পৌঁছে যাওয়ার জন্যই পরিবেশন করতে বারণ করা হয়েছিল বলেই মনে হচ্ছে। তবে, যে কর্মী পরিবেশন করতে গিয়েছিলেন, তাঁর বাড়িতে কাজ ছিল বলে আগে খাবার দিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। আমি খাবার চেখে দেখেছি। খাবারের নমুনাও সংগ্রহ করে রাখছি। খাদ্য সুরক্ষা দফতরের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হবে।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম মতো সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ওই ওয়ার্ডে প্রাতঃরাশ দেওয়া হয়। দুপুরের খাবার দেওয়ার কথা সাড়ে ১২টা নাগাদ। কিন্তু তার আগেই খাবার চলে যায়। খাবারে ছিল ছিল ভাত, ডাল, তরকারি ও মুরগির মাংস। কিন্তু তারপরেই ওই ঘটনা। শোরগোল থামলে সাড়ে ১২টার পরে ফের খাবার দেওয়া হয়।
ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা নার্সরা জানান, তাঁরা একটি ফোনে খাবার বিলি বন্ধের নির্দেশ পান। তাঁদের একজন বলেন, ‘‘সম্ভবত ওয়ার্ড মাস্টারের ঘর থেকে ফোনটা এসেছিল। বলা হয়েছিল, অবিলম্বে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিন। কাউকে দিতে দেবেন না। আমরাও তাই ভেবেছিলাম কিছু একটা হয়েছে হয়তো। তাই ফেলে দিতে বলেছিলাম।’’
এক রোগিণীর ছেলে সঞ্জয় বাউল দাস বলেন, ‘‘মা সবে খেতে শুরু করেছিল। দিদিরা (নার্স) এসে বললেন, কেউ খাবেন না, ফেলে দিন। আমরা ভাবলাম, খাবারে নিশ্চয়ই কিছু পড়েছে। ফেলে দিই।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)