এক বছর আগে বানে তোড়ে ভেঙে গিয়েছিল হাওড়ার শিবপুর লঞ্চঘাটের জেটি। সেই জেটির গ্যাংওয়ে (যার উপর দিয়ে হেঁটে লঞ্চে উঠতে হয়) গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছিল, আর পনটুন ভেসে গিয়েছিল গঙ্গায়। প্রায় এক বছর পরে গঙ্গা থেকে সেই গ্যাংওয়ে উদ্ধার করতে এসে বিপাকে পড়েছেন রাজ্য ভূতল পরিবহণ দফতরের ঠিকা শ্রমিকেরা। গত শনিবার থেকে কাজ শুরু কথা থাকলেও যন্ত্রাংশ নিয়ে ট্রলার না আসায় নদীতীরে দিন চারেক অপেক্ষা করেন তাঁরা। এর পরে দেখা যায়, ট্রলারের বদলে এসেছে একটি ডিঙি নৌকা। ফলে স্বাভাবিক ভাবে কাজ শুরু না হওয়ায় মাথায় হাত ঠিকাদারের।
গত ১০ বছরে অন্তত বার চারেক ভরা কোটাল বা বড় বানের তোড়ে বার বার ভেঙে পড়েছে শিবপুর লঞ্চঘাটের জেটি। গত বছরের মার্চে বানের তোড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল সেটির। তখন থেকে বন্ধ হয়ে যায় শিবপুর থেকে লঞ্চ চলাচল। ফলে সমস্যায় পড়েন কয়েক হাজার নিত্যযাত্রী। অভিযোগ, গত এক বছর ধরে হাওড়ার অন্যতম ব্যস্ত ফেরিঘাটটি বন্ধ থাকলেও কোনও ব্যবস্থাই নেননি হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা। আর্থিক সমস্যায় ধুঁকতে থাকা সমিতির কর্তারা অবশ্য এর দায় ঠেলছেন রাজ্য পরিবহণ দফতরের দিকে।
এ বিষয়ে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির অধিকর্তা অজয় দে বলেন, ‘‘এইসব মেরামতির কাজ সাধারণত পরিবহণ দফতর করে। আমরা দফতরের সঙ্গে সবসময়ে যোগাযোগ রেখেছিলাম। ওদের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গোলমাল ছিল। এখন মিটে গিয়েছে।’’ কিন্তু টেন্ডার-সমস্যা মিটলেও কাজে নেমে শ্রমিকেরা যে ট্রলার না আসায় স্রেফ বসে রয়েছেন, সে খবরই রাখেননি ওই সমিতির চেয়ারম্যান বাপি মান্না। তিনি বলেন, ‘‘এটা আমি জানতাম না। আমি ফেরিঘাটে গিয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে আজই কথা বলব।’’
এই গুরুত্বপূর্ণ ফেরিঘাট নিয়ে গত দেড় দশক ধরে পরিবহণ দফতর বা হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি দায়সারা মনোভাব দেখিয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও নবান্নে রাজ্যের প্রধান সচিবালয় হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, সরকারি কর্মীদের সহজে নবান্নে পৌঁছতে শিবপুর লঞ্চঘাটকে সাজাতে হবে। এ জন্য রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সেচমন্ত্রী থাকার সময়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই লঞ্চঘাটটির আধুনিকীকরণও করা হয়। এর পরে ২০১৯ সালে বানের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফের ১০ কোটি টাকা খরচ করে মেরামত করা হয়। তবে গত ১০ বছরে বার বার বানের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে ওই জেটির গ্যাংওয়ে। ফলে একাধিক বার অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই ঘাটটি।
এ বারও ক্ষতির পরিমাণ যে অনেকটাই, তা মানছেন ওই ঘাটে মেরামতির কাজে আসা ঠিকাদার মেহের আলি। তিনি বলেন, ‘‘গঙ্গায় ডুবে থাকা গ্যাংওয়ে তুলতেই ৪ লক্ষ টাকা খরচ হবে। এর পরে সেটি মেরামত করে পনটুনের সঙ্গে জোড়া লাগাতেও অনেক খরচ। কিন্তু কাজ করব কী? শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে মজুরি দিতে হচ্ছে। একটিও ট্রলার না এলে তো কাজই করা যাবে না। অথচ ট্রলারের বদলে ডিঙি নৌকা পাঠিয়েছে। ওই দিয়ে কাজ হবে কী করে?’’
রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বুধবারের মধ্যে একটি ট্রেলার পৌঁছে যাবে। তখন কাজ পুরো দমে শুরু হবে। আমরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)