করোনা-সাবধানতায় বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে সরকারি স্তরে। কিন্তু হুগলির গ্রামাঞ্চলে পরিস্রুত পানীয় জলেরই অভাব বাড়ছে। বাড়তি জল কোথা থেকে মিলবে, প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসী।
গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ পানীয় জলের জন্য নলকূপের উপরে নির্ভর করেন। কিন্তু গরম বাড়তেই জলস্তর নামতে থাকায় একের পর এক নলকূপ খারাপ হচ্ছে। ফিরে এসেছে সেই চেনা ছবি। অথচ, লকডাউনের জেরে তা সারানোও হচ্ছে না। অধিকাংশ পঞ্চায়েত অফিসও বন্ধ থাকছে বলে অভিযোগ। জরুরি পরিষেবার আওতায় থাকা সত্ত্বেও পানীয় জল সরবরাহ নিয়ে পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি উদাসীন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। এমনকি, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপ লাইন থেকেও অনেক জায়গায় জল মিলছে না।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) প্রলয় মজুমদার জানান, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর এবং বিডিওদের নির্দেশ দেওয়া রয়েছে, কোথাও পানীয় জলের সঙ্কটের অভিযোগ উঠলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে। জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “পাইপ লাইন কেটে যথেচ্ছ অবৈধ সংযোগ নেওয়ার ফলেই সব জায়গায় জল পৌঁছচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ কাটাও হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় বাধা এসেছে। সেই বাধা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলে কাটানোর চেষ্টা হচ্ছে। ওই বাধা কাটলেই সর্বত্রই জল পৌঁছবে।”
জেলার ১৮টি ব্লকের ২০৭টি পঞ্চায়েত এলাকায় মোট মৌজা ১৯৯৯টি। মৌজাপিছু ১০-১৫টি করে পঞ্চায়েতের নলকূপ আছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন গ্রামে শ’খানেক বিশেষ প্রযুক্তির ‘মার্ক টু’ নলকূপ আছে। জলস্তর নেমে গিয়ে সব ধরনের নলকূপের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি বিকল বলে বিভিন্ন পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে।
গোঘাটের কুমুড়শা পঞ্চায়েত এলাকার মথুরা গ্রামের বাসিন্দা বকুল সিংহর অভিযোগ, “এত বড় গ্রামে পঞ্চায়েতের নলকূপগুলির মধ্যে মাত্র দু’টি চালু আছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপ লাইনের ব্যবস্থা থাকলেও সেখান থেকেও জল বের হয় না। প্রতিবেশীর ব্যক্তিগত নলকূপই ভরসা। এখন লকডাউনে সেখান থেকেও জল নিতে গেলে কথা শুনতে হচ্ছে।” পঞ্চায়েত প্রধান উত্তমকুমার মুদি পানীয় জলের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “যন্ত্রাংশের দোকান বন্ধ। তাই মেরামতে সমস্যা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের গ্রামীণ জল সরবরাহ প্রকল্প থেকেও জল না-মেলায় মথুরাতে আরও দু’টি নলকূপ বসানোও দরকার।”
জলসঙ্কটের খবর মিলেছে পুরশুড়ার ভাঙামোড়া, আরামবাগের মইগ্রাম, পান্ডুয়ার নীরদগড়-সহ বেশ কিছু এলাকা থেকেও। নলকূপ বিকলের কথা অধিকাংশ পঞ্চায়েত প্রধানই স্বীকার করেছেন। গোঘাট-২ ব্লকের কামারপুকুর পঞ্চায়েতের প্রধান তপন মণ্ডল বলেন, “জলস্তর নেমে যাওয়ায় প্রতি বছর গ্রীষ্মেই এই বিপর্যয় হয়। তা দফায় দফায় সারানোও হয়। এখন আবার লকডাউন। নলকূপ সারানোর যন্ত্রপাতি কেনার জন্য নির্দিষ্ট কিছু দিন যাতে হার্ডওয়্যারে দোকান খোলা থাকে, সে বিষয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ সেই ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। আমরা কিছু নলকূপ সারিয়েছি।’’