Advertisement
E-Paper

খামারে মরছে মুরগি, মাংসের জোগানে প্রশ্ন

রাজ্যে মুরগির মাংসের অন্যতম উৎপাদক জেলা হুগলি। প্রায় ৮০০ খামার আছে এই জেলায়।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০১:৪৯
শূন্য মুরগির খামার। আরামবাগে ছবিটি তুলেছেন সঞ্জীব ঘোষ।

শূন্য মুরগির খামার। আরামবাগে ছবিটি তুলেছেন সঞ্জীব ঘোষ।

লকডাউনের জেরে খাবারের জোগান কার্যত বন্ধ। ফলে, এ রাজ্যের বহু খামারের মুরগি মরছে। মিলছে না ছানাও। তাই মুরগি পালনও শিকেয় উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে আর কিছু দিনের মধ্যে রাজ্যে মুরগির মাংস আদৌ মিলবে কিনা, সে প্রশ্নও উঠে গিয়েছে।

রাজ্যে মুরগির মাংসের অন্যতম উৎপাদক জেলা হুগলি। প্রায় ৮০০ খামার আছে এই জেলায়। জেলার নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পরে এখানকার মুরগি কলকাতা এবং অন্য জেলাগুলিতেও সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে খামার- মালিকেরা দিশেহারা। উদ্বেগে রয়েছেন রাজ্য পোলট্রি ফেডারেশনের কর্তারাও।

ফেডারেশনের জেলা কমিটির সভাপতি সুজয় সাধু বলেন, “মুরগির মাংসের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। জেলার খামারগুলিতে এখনও যা মুরগি রয়ে গিয়েছে, তা-ও খাবারের অভাবে মরছে। খামারগুলিতে প্রচুর লোকসান হচ্ছে। করোনার ধাক্কা সামলে ওঠার পরেও আগামী কয়েক মাস হয়তো বাজারে মুরগির মাংসই থাকবে না।’’

পশুখাদ্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মধ্যেই পড়ে। লকডাউনে সেই পণ্য পরিবহণে ছাড় রয়েছে। তা হলে কেন মিলছে না মুরগির খাবার?

জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের উপ-অধিকর্তা রূপম বড়ুয়ার দাবি, ‘‘মুরগির খাবারের অভাব নেই। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে তা সরবরাহ করতেও কোথাও বাধা নেই। ডিলাররা মাল চাইলেই পাবেন।’’ কিন্তু মুরগির কারবারি একটি সংস্থার আরামবাগ শাখার সুপারভাইজার সৌরভ দে বলেন, “আমরাও জানি মুরগির খাবারের অভাব নেই। কিন্তু তা সংগ্রহ করার মতো শ্রমিক বা গাড়ি কোথায়? মুরগি চাষ ধ্বংসের মুখে। আমাদের সংস্থার এখনও দেড় লক্ষেরও বেশি মুরগি বিভিন্ন খামারে খাবারের অভাবে মরতে বসেছে।”

রাজ্য পোলট্রি ফেডারেশনের হুগলি শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার খামারগুলিতে সপ্তাহে গড়ে ৪ থেকে ৫ লক্ষ মুরগির উৎপাদন হয়। বিভিন্ন সংস্থা খামারগুলিতে ছানা সরবরাহ করে। ৩৮ থেকে ৪০ দিন পর মুরগি ন্যূনতম ২ কেজি ওজনের হয়ে গেলে সংস্থাই নিয়ে গিয়ে বিক্রির ব্যবস্থা করে। মুরগি ও ছানার খাবার, ওষুধ-সবই দেয় সংস্থা। এ জন্য কেজিপ্রতি তাদের খরচ হয় ৭৫-৮০ টাকা। মুরগি প্রতিপালন করে খামারগুলি কেজিপ্রতি সাড়ে ৬ টাকা কমিশন পায়।

দেশজোড়া লকডাউন ঘোষণার আগে-পরে দু’দিন পাইকারি ২০-৩০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করে সংস্থাগুলি। কিন্তু চাহিদা অনুপাতে বর্তমানে জোগান কমে যাওয়ায় দু’দিন ধরে পাইকারি ৫০ টাকা কেজি দরে তা বিক্রি হচ্ছে। অথচ, হুগলির খোলা বাজারে বিক্রি মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি দরে। রবিবারই আরামবাগ, খানকুল, গোঘাট, তারকেশ্বর, ধনেখালি-সহ জেলার অনেক জায়গাতেই ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে মুরগির মাংস বিকিয়েছে। ফলে, কালোবাজারির অভিযোগও উঠেছে। জেলা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা এ দিন সিঙ্গুর, চুঁচুড়া এবং ব্যান্ডেল বাজারে অভিযানও চালায়।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বেশ কিছু জায়গায় মুরগির মাংস ১২০ টাকা এবং তারও বেশি দরে বিক্রির অভিযোগ পেয়ে ব্যবসায়ীদের চরম সতর্ক করা হয়েছে। কেজিপ্রতি ৯০-১০০ টাকার বেশি দরে বিক্রি করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একটি ডিমের দাম সাড়ে ৫ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না।”

লকডাউনের জেরে পশুখাদ্যে টান পড়েছে। গোঘাটের কুমুড়শায় একটি খামারে প্রায় ৩৫০০ মুরগির চাষ হয়। খাদ্যাভাবে সেই খামারের প্রায় ১৫০০ মুরগি ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে বলে দাবি মালিক দেবীপ্রসাদ গুঁইয়ের। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউন ঘোষণার আগে আমার মুরগির বয়স ৪০ দিন হয়ে গিয়েছিল। ৫০ টাকা কেজি দরে তখন বিক্রি হয়েছে। আর এখন অর্ধেক মরেই গিয়েছে। প্রচুর লোকসান হল।” চোখের সামনে মুরগি মরে যেতে দেখেও কিছু করতে পারছেন না গোঘাটেরই বামনিয়া গ্রামের খামার-মালিক কাশীনাথ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘রবিবার আমার খামারের মুরগিগুলো ২৭

দিনে পড়েছে। প্রতিদিন ৪ বস্তা খাবার লাগে তিন হাজার মুরগির জন্য। লকডাউনের পর কোনও খাবার সরবরাহ হচ্ছে না। চোখের সামনে মুরগিগুলোকে মরতে দেখছি।”

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy