শনিবার উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেওয়া হল। মানা হল না দূরত্ব বিধি। ছবি: সুব্রত জানা।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘরে ‘পোডিয়ামে’ বসে ‘ভ্যাকসিনেটর’। ১০টা বাজতেই বিশ্রামকক্ষ থেকে সেখানে উঠে গেলেন বাগনানের শিশু চিকিৎসক অনুপ মঙ্গল। শনিবার হাওড়ার বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে তিনিই প্রথম টিকা নিলেন।
বাড়ি ফেরার আগে অনুপবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আজকের অভিজ্ঞতা অনন্য। একটা বিপ্লবের সাক্ষী হলাম। খুব ভাল লাগছে।’’
মধ্যবয়সী অনুপবাবুকে এ দিন হাত ধরে টিকাকরণের ঘরে পৌঁছে দেন বাগনান-১ ব্লকের বিএমওএইচ শেখ সানাউল্লা। তিনি অনুপবাবুকে আশ্বাস দেন, কোনও অসুবিধা হবে না। টেটভ্যাক-এর থেকেও কম যন্ত্রণাদায়ক এই টিকা। ‘ভ্যাকসিনেটর’ মহিলাকে সানাউল্লা বলে দিলেন, ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। একটি টিকাকরণের জন্য বরাদ্দ তিন মিনিট। তা যথেষ্ট।
চিকিৎসক হিসাবে কয়েক হাজার শিশুকে যিনি অবলীলায় নানা ধরনের টিকা দিয়েছেন, সেই অনুপবাবু নিজে কোভিড টিকা নিলেন বাধ্য ছাত্রের মতোই! তারপরে সানাউল্লা হাত ধরে তাঁকে নিয়ে গেলেন পর্যবেক্ষণ-কক্ষে। সেখানে চেয়ারে আধ ঘণ্টা বসে থাকার পরে মুক্তি পেলেন অনুপবাবু।
এক ‘ভ্যাকসিনেশন’ অফিসার তাঁর হাতে ধরিয়ে দিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের টেলিফোন নম্বর লেখা একটি স্লিপ। বললেন, আগামী ২৮ দিনের মধ্যে কোনও শারীরিক সমস্যা হলে অনুপবাবু যেন এই নম্বরে যেন যোগাযোগ করেন।
ওই হাসপাতালে মোট ১০৪০ জনের টিকাকরণের ব্যবস্থা হয়েছে। সবাই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালক, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরাও টিকাকরণের আওতায় রয়েছেন। প্রতিদিন ১০০ জনের টিকা দেওয়া হবে।
এ দিন স্থানীয় বিধায়ক অরুণাভ সেন এসে পুরো ব্যবস্থা দেখেন। টিকাপ্রাপ্তদের অসুবিধা হচ্ছে কিনা, জানতে চান। পরে তিনি বলেন, ‘‘নিখুঁত ভাবে টিকাকরণ চলছে।’’ সানাউল্লা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যভবনের গাইড লাইন অক্ষরে অক্ষরে মানা হচ্ছে।’’
হাসপাতালের একটি সদ্য সংস্কার হওয়া ভবনে টিকাকরণের ব্যবস্থা হয়। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন চার ‘ভ্যাকসিনেশন’ অফিসার। যাঁদের প্রথম দিন টিকা দেওয়া হবে, শুক্রবার রাতেই তাঁদের ফোন করে হাসপাতালে আসার জন্য বলা হয়। দশটার আগেই অনেকে চলে আসেন। প্রথম ভ্যাকসিনেশন অফিসার ভবনে ঢোকার মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার দিচ্ছিলেন। দ্বিতীয় অফিসার তালিকা দেখে নাম মিলিয়ে নিচ্ছিলেন। এরপরে ‘ভ্যাকসিনেটর’ টিকা দিচ্ছিলেন।
তৃতীয় ভ্যাকসিনশন অফিসারের দায়িত্ব ছিল পর্যবেক্ষণ। ওই ঘর থেকে বেরনোর পরে চতুর্থ ভ্যাকসিনেশন অফিসার টিকাপ্রাপ্তকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফোন নম্বরের স্লিপ দিচ্ছিলেন।
টিকা নেওয়ার পরে করুণা পাত্র নামে এক আশাকর্মী বলেন, ‘‘করোনার প্রকোপ যখন তুঙ্গে, তখন গ্রামে কাজ করেছি। গ্রামবাসীদের হুমকি, বিক্ষোভ সামলাতে হয়েছে। আজ টিকা নিয়ে সব দুঃখ চলে গিয়েছে। আমি গর্বিত যে, প্রথম দিনেই সুযোগ পেলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy