Advertisement
E-Paper

হুল্লোড়ে দূষণ শব্দে ও দৃশ্যে,পুলিশ দর্শক

নাচের দাপট অব্যহত ছিল গড়চুমুক বা ফুলেশ্বরেও। গঙ্গায়, দামোদরে নামল নৌকো। সেখানেও বাজল গান, সঙ্গে নাচ। অভিযোগ, আরোহীরা বেশিরভাগই মদ্যপান করে নৌকোয় চড়েছিলেন। নজরদার বলতে কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩১
নীরব: পুলিশের সামনেই ডিজে বাজিয়ে উদ্দাম নাচ। পোলবার মহানাদে চন্দ্রদিঘির পাড়ে। ছবি: সুশান্ত সরকার

নীরব: পুলিশের সামনেই ডিজে বাজিয়ে উদ্দাম নাচ। পোলবার মহানাদে চন্দ্রদিঘির পাড়ে। ছবি: সুশান্ত সরকার

জাতীয় সড়কের উপর ছুটে চলেছে একের পর এক ম্যাটাডোর। খোলা ডালার ভিতরে উদ্দাম নাচ আর উত্তাল গানের সুর— বাজছে ডিজে। পাশ দিয়ে যাওয়া বাস বা অন্য গাড়ি তারস্বরে হর্ন বাজিয়েও ম্যাটাডোর চালকের কানে তুলতে পারেনি।

নাচের দাপট অব্যহত ছিল গড়চুমুক বা ফুলেশ্বরেও। গঙ্গায়, দামোদরে নামল নৌকো। সেখানেও বাজল গান, সঙ্গে নাচ। অভিযোগ, আরোহীরা বেশিরভাগই মদ্যপান করে নৌকোয় চড়েছিলেন। নজরদার বলতে কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার।

গড়চুমুকের হরিণ প্রকল্প এলাকার রাস্তায় ভিড় যত মানুষের। ততই ছিল মোটর বাইকের। হেলমেটের বালাই অবশ্য রাখেননি বেশির ভাগ আরোহীই। মোটর বাইকের দ্রুত গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি সাধারণ মানুষ। হুগলির আরামবাগ থেকে এসেছিলেন মন্দিরা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পরিবারের ছোটদের নিয়ে এসেছিলাম আনন্দ করতে। ভেবেছিলাম সবুজের মধ্যে ওরা একটু ভাল থাকবে। কোথায় কী? বাইকের ভয়ে ওদের হাত ছাড়তেই পারছি না। ওরা একটু দৌড়দৌড়িই করতে পারল না।’’ পাশ থেকে আর এক পর্যটক বলেন, ‘‘পুলিশ এই দিনটায় মোটর বাইক নিয়ন্ত্রণ করতে পারত।’’

হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছে তারা। সর্বত্র পরিস্থিতি তাই স্বাভাবিক ছিল।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, গড়চুমুকে টিকিট কাটলে মোটর বাইক নিয়ে ঢোকার অনুমতি মেলে। মোটর বাইকের টিকিটের জন্য জেলা পরিষদের আয়ও বাড়ে। ফলে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনি ১ জানুয়ারিতেও।

গড়চুমুক হরিণ প্রকল্পের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরে মোটর বাইকের জন্য পার্কিং করা যায় কিনা তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’ হাওড়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্যও জানান, দু’চাকার জন্য আলাদা পার্কিং পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে। শীঘ্রই তা রূপায়ণের চেষ্টা করা হবে। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘পিকনিক স্পটগুলিতে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল।’’

ছবিটা প্রায় একই ছিল হুগলিতেও। বছরের প্রথম দিনটি কেটে গেল ডিজের কানফাটানো শব্দ, মদ্যপান আর উদ্দাম নাচানাচিতে। পুলিশ স্রেফ দর্শক! হাতেগোনা দু’এক জায়গায় অবশ্য এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হল। তবে, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার এবং হুগলি (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন অবশ্য দাবি করেছেন, প্রতিটি পিকনিক স্পটে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এ দিন সকাল থেকেই জিটি রোড, দিল্লি রোড, অসম লিঙ্ক রোড ছিল ট্রাক, ম্যাটাডোরের দখলে। গাড়িতে বাঁধা ডিজে বক্স। থরে থরে সাজানো মাইক—তারস্বরে গান আর হুল্লোড়। গোঘাটের গড়মান্দারণ, আরামবাগের চাঁদুর জঙ্গল, খানাকুলের রামমোহনের আমবাগান বা নদীর চরে হুল্লো়ড় ছিল লাগামছাড়া।

অভিযোগ, ডিজে বাজানো বা মদ্যপান নিয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত পুলিশের কিছুটা কড়াকড়ি থাকলেও তারপরে আর রাশ টানা যায়নি। তবে ছোটখাট কয়েকটি মারামারি ছাড়া বড় অঘটন ঘটেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। মারপিটের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়নি।

সকালে চাঁদুর ফরেস্ট পুলিশ দু’টি দলের ডিজে বন্ধ করে। যদিও ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আরও ৬টি দল ডিজে এনে তারস্বরে বাজাতে শুরু করে। আরামবাগের বাসিন্দা শেখ শাহনওয়াজের অভিযোগ, “ডিজে এবং মদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ হবে শুনেই দু’বছর পরে সপরিবারে পিকনিকে এসেছি। সকালে পুলিশ দু’টি ডিজে বন্ধ করলেও বজেয়াপ্ত করল না। পুলিশ যেতেই ফের বাজতে শুরু করল। চলল মদের ফোয়ারা।” পান্ডুয়া, সিমলাগড়, বলাগড়, মগরা, পোলবার বিভিন্ন পিকনিক স্পটের চেহারাও ছিল একই। মহানাদে দিঘিতে বোটিং করতে করতেই পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিতে দেখা গেল যুবকদের। নিষেধ করার কেউ ছিল না।

চড়ুইভাতি সেরে ফেরার পথেও থামল না ডিজের তাণ্ডব। পুলিশের অবশ্য দাবি, বিভিন্ন জায়গাতেই ডিজের আওয়াজ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ছবিটা আলাদা ছিল সিঙ্গুরে। জেলা পরিষদের নিউ দিঘা পার্কে গোটা ষাটেক দল এসেছিল বনভোজনে। সেখানে মাইকে বার বার ঘোষণা করা হয়ে ডিজে না বাজাতে বা মদ্যপান না করতে। বড়দিনের খুল্লমখুল্লা মদ্যপানের আসর অবশ্য এ দিন বসেনি এখানে। ভদ্রেশ্বরে দিল্লি রোড লাগোয়া কয়েকটি পিকনিক স্পটে পুলিশ ডিজে নিয়ন্ত্রণ করে।

Sound Pollution Crcker Police West Bengal Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy