প্রতীকী ছবি।
কখনও-সখনও সভা অথবা মাইকে প্রচার হচ্ছে ঠিকই। এর বাইরে শ্রীরামপুর শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধে পুর-কর্তৃপক্ষের আর তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না কারও। ফলে, এই সংক্রান্ত দূষণও কমার কোনও লক্ষণ নেই। আশপাশের কয়েকটি পুরসভা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধে চেষ্টাচরিত্র করলেও শ্রীরামপুরের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।
প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহ মাত্রা নিয়ে পরিবেশকর্মীরা উদ্বিগ্ন। একবার ব্যবহৃত হয়, এমন ফিনফিনে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ যাতে বন্ধ হয়, তা নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। বিভিন্ন পুরসভাকে এ নিয়ে সচেতন হওয়ার কথা বলছে তারা। কয়েক বছর আগে উত্তরপাড়া পুরসভার লাগাতার অভিযানে সেখানে প্লাস্টিক-ক্যারিব্যাগ অনেকটাই বোতলবন্দি হয়েছিল। পরে নজরদারির অভাবে এই বিপদ ফিরে আসে। তবে, এ নিয়ে ফের পরিকল্পনা করছেন ওই পুরসভার কর্তারা। শহরের গঙ্গা লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকাকে ‘গ্রিন জ়োন’-এর রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে এই ক্যারিব্যগ ব্যবহার চলবে না। বৈদ্যবাটী পুরসভাও লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের বিরুদ্ধে। পুরকর্তা এবং সাফাই বিভাগের আধিকারিকরা দোকান-বাজারে ঘুরছেন। ওই ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করলে জরিমানা করা হচ্ছে।
কিন্তু শ্রীরামপুরে?
গঙ্গাপাড়ের প্রাচীন এই শহরের যে কোনও বাজারে বা রাস্তাঘাটের দিকে তাকালেই ছবিটা পরিষ্কার হয়। সর্বত্রই ছড়িয়ে থাকে ওই ক্যারিব্যাগ। সচেতনতার বালাই নেই। অনেক নালা-নর্দমা কার্যত ঢেকে গিয়েছে প্লাস্টিকের জিনিসে। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের সময় প্লাস্টিকের গ্লাস, ক্যারিব্যাগ, থার্মোকলের থালায় রাস্তাঘাট ছয়লাপ হয়ে থাকে।
পরিবেশপ্রেমীদের দাবি, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধে সচেতনতার জন্য দু’-এক বার নামমাত্র কর্মসূচি নিয়েই পুরসভা দায় সেরেছে। ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, মাইকে প্রচার হওয়ায় অনেকেই প্লাস্টিক-ক্যারিব্যাগ রাখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কড়াকড়ি না-থাকায় তা ফিরে এসেছে। শহরের বটতলার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘পুরসভার টানা নজরদারি থাকলে এটা আটকানো কোনও ব্যাপারই ছিল না। পাশের শেওড়াফুলি-বৈদ্যবাটী শহরে তো হল। আসল কথাটা হল, এখানে সদিচ্ছা নেই।’’ মাহেশের এক আনাজ বিক্রেতার কথায়, ‘‘আমি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ রাখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সবাই তা করেনি। এ নিয়ে খরিদ্দারদের সঙ্গে অশান্তি হচ্ছিল। যাঁরা ওই ক্যারিব্যাগ রাখছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেই কারণে ফের ওই ক্যারিব্যাগ রাখছি।’’ শহরের তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যেও এই নিয়ে হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। এক মাছ বিক্রেতার কথায়, ‘‘অনেককে একটি ক্যারিব্যাগে মাছ দিলে হয় না। দু’টি চেয়ে নেন।’’
পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, শাসক বা বিরোধী— কোনও রাজনৈতিক দলই এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। শহরের দে স্ট্রিট এলাকার এক প্রৌঢ়ের খেদ, ‘‘এমনিতেই এই শহরে বিরোধীদের আন্দোলন কম। তার উপরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের মতো বিষয় নিয়ে রাস্তায় নামার সময় বা ইচ্ছে ওদের কোথায়!’’
বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যাম বসু অবশ্য বলেন, ‘‘পুরসভা একবার প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগমুক্ত শহর করার কথা প্রচার করল। কিন্তু কার্যকর করল না। ফলে, ক্ষতিকর এই জিনিসের ব্যবহার অবাধেই চলছে। আমরা স্বচ্ছতা অভিযানে রাস্তাঘাটে জমে থাকা প্লাস্টিক পরিষ্কার করেছি। কিন্তু বন্ধ করার দায়িত্ব তো পুরসভার।’’
কী বলছে পুরসভা?
পুরকর্তাদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ এই নিয়ে সচেতন নন। পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে মাইক প্রচার, সচেতন করার কাজ চলে। এ ভাবেই সচেতন করা হবে। তার পরে ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা বলে বাজারে বাজারে আমরা হানা দেব।’’
সেই দিন কবে আসে, তা দেখার অপেক্ষাতেই পরিবেশপ্রেমীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy