Advertisement
E-Paper

‘ও তো মায়ের দুধ খায়, তাই অনশন করছি ওকে নিয়েই’

মেয়ো রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন করছেন স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অন্তত ৪০০ চাকরিপ্রার্থী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৪:০৭
এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের অনশনে সন্তানকে জল খাওয়াচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান থেকে আসা সোমা প্রামাণিক।

এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের অনশনে সন্তানকে জল খাওয়াচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান থেকে আসা সোমা প্রামাণিক।

জ্বর আসায় চাদর মুড়ি দিয়ে কেউ কেউ শুয়ে আছেন ফুটপাতে। হাতে স্যালাইনের সুচ বেঁধানো অবস্থায় শূন্য দৃষ্টিতে বসে আছেন কেউ কেউ। সাত দিন ধরে অনশনে কোনও কোনও মহিলা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন যে, তাঁদের হাঁটতে হচ্ছে অন্য আন্দোলনকারীদের সাহায্য নিয়ে।

মেয়ো রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন করছেন স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অন্তত ৪০০ চাকরিপ্রার্থী। তাঁরা জানিয়ে দেন, বুধবার সাত দিনে পড়ল এই অনশন। এবং দাবি পূরণের আগে তাঁরা অনশন ভাঙবেন না।

খোলা আকাশের নীচে ফুটপাতের ধারে কোলে বাচ্চা নিয়ে বসে ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের বাগনাপাড়ার বাসিন্দা সোমা প্রামাণিক। শনিবার থেকে অনশন করছেন তিনি। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বুধবার সকাল থেকে। বাচ্চা কোলে নিয়ে অনশনের মঞ্চে বসেছেন কেন? জবাবে অনশনরত মায়ের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ও তো মায়ের দুধ খায়। ওকে কাছছাড়া করি কী করে?’’

ভূগোলের শিক্ষিকা হতে ইচ্ছুক সোমাদেবী জানান, এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করে প্যানেলভুক্ত হয়ে বসে আছেন তিনি। স্বামী শ্রীমন্ত প্রামাণিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে দেখে যাচ্ছেন। সোমাদেবীর পরিবারের সকলেই নৈতিক ভাবে এই আন্দোলন সমর্থন করছেন। তাঁদের একটাই প্রশ্ন, আর কত দিন ওঁকে প্যানেলভুক্ত হয়ে ওয়েটিং লিস্টে থাকতে হবে?

অনশন-মঞ্চে কৃষ্ণা দাসের দেখভাল করছেন তাঁর পাশে বসে থাকা অন্য অনশনকারীরাই। নিবেদিতা সরকার নামে এক অনশনকারী বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে অনশন চালিয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণা। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল মঙ্গলবার। এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে ফিরে ফের অনশনে বসেছে। এতটাই জেদ ওর।’’ সাত দিনের অনশনে স্বর ক্ষীণ হয়ে এসেছে ভূগোলের ওই শিক্ষিকা-পদ প্রার্থীর। তিনি বলেন, ‘‘২০১৬ সাল থেকে পাশ করে বসে আছি। শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার কোনও আশার বাণী শোনাতে পারেননি। কী করে আমি অনশন তুলব? পরিবারের জন্য চাকরিটা যে খুব দরকার।’’

অনশনকারীরা জানাচ্ছেন, রাতেও আকাশের নীচে বসে থাকতে হচ্ছে। পানীয় জল নেই। শৌচালয় কিছুটা দূরে। সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন মেয়েরা। এ-পর্যন্ত ৩২ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনশনকারীদের অভিযোগ, ত্রিপল টাঙানোর অনুমতি পর্যন্ত দিচ্ছে না পুলিশ। যদিও পুলিশের দাবি, বৃষ্টি পড়লে তারা ত্রিপল টাঙানোর অনুমতি দিয়েছে।

অর্পিতা দাস নামে এক অনশনকারী বলেন, ‘‘আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চাই। তা হলেই সমাধানসূত্র মিলবে। এবং আমরা সকলেই চাকরি পাব।’’ এ দিন অনশন-মঞ্চে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম এবং ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র।

২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মেয়ো রোডের প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুলের শিক্ষকপদ প্রার্থীরা। তাঁদের দাবি, বহু পদ শূন্য পড়ে আছে। তা সত্ত্বেও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বহু শিক্ষকপদ প্রার্থীর নাম ওয়েটিং লিস্টে তুলেই কর্তৃপক্ষ চুপ করে বসে আছেন। ওই সব প্রার্থী চাকরি পাচ্ছেন না।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মঙ্গলবার আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘বিক্ষোভকারীদের দাবিদাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’

Hunger Strike SSC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy